Sajeeb Wajed Ahmed Joy and Bangabandhu

Sajeeb Wajed Ahmed Joy:

Sajeeb Ahmed Wazed (Bangla: সজীব ওয়াজেদ) (born July 27, 1971), also known as Sajeeb Wazed Joy, is an IT professional who was selected by World Economic Forum as one of the 250 Young Global Leaders of the World. He is the son of Sheikh Hasina Wazed, the current Prime Minister of Bangladesh and the grandson of Sheikh Mujibur Rahman, the first President of Bangladesh

Early life and education

Sajeeb Wazed was born in 1971 during the Bangladesh Liberation War to the eminent Bengali nuclear scientist Dr. M. A. Wazed Miah and Sheikh Hasina Wazed. His birth during the war and subsequent victory of the Bengalis earned him the nickname given by his maternal grandfather, Sheikh Mujibur Rahman, “Joy” which in Bengali means victory.

Wazed was schooled in India. His early days were spent at boarding in St. Joseph’s College Nainital, and later at Kodaikanal International School in Palani Hills, Tamil Nadu. He pursued a Bachelor of Science degree in computer science, physics and mathematics from Bangalore University. Wazed then pursued another bachelor of science degree in computer engineering at the University of Texas, Arlington in the United States. Subsequently, Wazed attended the Kennedy School of Government in Harvard University, where he completed a Masters in Public Administration.

Politics

In 2004, Sajeeb Wazed visited Bangladesh amid speculations that he would be taking up the Sheikh family’s political mantle. He and his wife received a rousing reception as they landed in Shahjalal International Airport. Thousands of people lined Dhaka’s roads to have glimpse of Joy and his wife. During the visit he rejected a letter sent by Tarique Rahman, son of the then Prime Minister and his mother’s arch rival, Khaleda Zia. The letter congratulated Sajeeb’s possible entry into politics.

In 2007, Wazed was selected by the World Economic Forum in Davos as one of the “250 Young Global Leaders of the World”. The forum cited his role as Advisor to the President of the Bangladesh Awami League.

During the 2006–2008 Bangladeshi political crisis and Minus Two controversy, both Sheikh Hasina and Khaleda Zia were arrested by the military backed interim government on charges of corruption and “anti-state” activities. Hasina maintained that the charges were baseless and her detention was part of efforts by the military to keep her out of the political arena in order to pave the way for another period of quasi-military rule in Bangladesh. Sajeeb Wazed began campaigning in the United States and Europe for the release of his mother and other detained high-profile politicians. Hasina was eventually released in June 2008. She subsequently traveled to the United States for medical treatment.

In December 2008, Bangladesh held national elections that saw Sheikh Hasina’s Awami League and its coalition partners secure the biggest parliamentary majority since 1973, capturing 262 seats in the 300 seat parliament, 230 of which went to the Awami League. Sheikh Hasina was sworn in as the 14th Prime Minister of Bangladesh on 6 January 2009. Prior to the elections, Wazed wrote an article in the Harvard International Review in which he outlined a “secular plan” to stem the rise of Islamic extremism in Bangladesh.

Wazed gave an interview to the BBC in February, 2009 in the aftermath of the violent Bangladesh Rifles mutiny. Asked about security threats faced by his mother from tension provoked in the military by the mutiny and whether certain quarters were trying to stage a scenario similar to that of his grandfather’s assassination in 1975 during a coup by junior army officers, Wazed commented that there was a “distinct possibility” of such a situation being intended. He also stressed that security was beefed up at the Prime Minister’s residence and went on to praise his mother’s handling of the mutiny. “This is probably the biggest incident Bangladesh has had since 1975 and our government and the prime minister has handled this compassionately, pragmatically but decisively to bring the situation under control” he said.

Primary membership

On 25 February 2009, Wazed officially joined the Awami League as a primary member of the Rangpur district unit of the party. Awami League Joint General Secretary Mahbubul Alam Hanif handed over Wazed’s membership form to district party leaders. Rangpur is the ancestral home district of his father Wazed Miah.

The move by Wazed to formally join the Awami League was welcomed by many political leaders and commentators, including the Bangladesh Nationalist Party. Senior BNP leader Nazrul Islam Khan gave his party’s official reaction, stating “we see the matter positively”.

Digital Bangladesh

Within days of joining the Awami League as a primary member, Wazed, in his capacity as an IT policy analyst, unveiled the concept paper and action plan for the government’s ambitious “Digital Bangladesh” scheme; to develop a strong ICT industry in Bangladesh and initiate e-governance and IT education on a mass scale. Wazed emphasized the use of information technology to achieve Bangladesh’s development goals. He also noted that the Digital Bangladesh “scheme” would contribute to a more transparent system of government through e-governance, as it would greatly reduce massive bureaucratic corruption in Bangladesh. He also spoke of Bangladesh’s potential to become an IT outsourcing hub in the next few years given its various advantages in a growing young educated population with a “neutral” English accent. Wazed stated that by the 2021, the IT industry can overtake textiles and readymade garments as the principal foreign exchange earner for Bangladesh.

Monday 26 February 2018

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্ম নেয়া প্রথম বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধা মহিয়সী নারী


লীলা রায় ও দীপালী সঙ্ঘ
চট্টগ্রামের, পটিয়ার ধলঘাটে বীরকণ্যা প্রীতিলতা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ২০০৫ সনের ২২ শে ফেব্রুয়ারী প্রতিষ্ঠিত প্রীতিলতার আবক্ষ মূর্তির স্থিরচিত্র।
প্রীতিলতা তখন সবে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রেখেছেন। চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা তখন মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন শেষে সক্রিয় হচ্ছিলেন। এর মধ্যে ১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস এর মোড়ে সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকা ছিনতাই করে। এ ছিনতাইয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পর গোপন বৈঠক চলাকালীন অবস্থায় বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সাথে যুদ্ধের পর গ্রেফতার হন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় রেলওয়ে ডাকাতি মামলা। এই ঘটনা কিশোরী প্রীতিলতার মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। স্কুলের প্রিয় শিক্ষক ঊষাদির সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই মামলার ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে অনেক কিছুই জানতে পারেন তিনি। ঊষাদির দেয়া “ঝাঁসীর রাণী” বইটি পড়ার সময় ঝাঁসীর রাণী লক্ষীবাইয়ের জীবনী তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। ১৯২৪ সালে বেঙ্গল অর্ডিনান্স নামে এক জরুরি আইনে বিপ্লবীদের বিনাবিচারে আটক করা শুরু হয়। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদলের অনেক নেতা ও সদস্য এই আইনে আটক হয়েছিল। তখন বিপ্লবী সংগঠনের ছাত্র আর যুবকদেরকে অস্ত্রশস্ত্র, সাইকেল ও বইপত্র গোপনে রাখার ব্যবস্থা করতে হত। সরকার বিপ্লবীদের প্রকাশনা সমুহ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। প্রীতিলতার নিকট-আত্মীয় পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন বিপ্লবী দলের কর্মী। তিনি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত কিছু গোপন বই প্রীতিলতার কাছে রাখেন। তখন তিনি দশম শ্রেনীর ছাত্রী। লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি পড়েন “দেশের কথা”, “বাঘা যতীন”, “ক্ষুদিরাম” আর “কানাইলাল”।এই সমস্ত গ্রন্থ প্রীতিলতাকে বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত করে। প্রীতিলতা দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদারের কাছে বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করার গভীর ইচ্ছার কথা বলেন। কিন্তু তখনো পর্যন্ত বিপ্লবীদলে মহিলা সদস্য গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য কোন মেয়েদের সাথে মেলামেশা করাও বিপ্লবীদের জন্য নিষেধ ছিলো।
আত্মাহুতির স্থানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে ২০১২ সালের ২ অক্টোবর প্রীতিলতার ব্রোঞ্জমূর্তি উন্মোচিত হয়।

ঢাকায় যখন প্রীতিলতা পড়তে যান তখন “শ্রীসংঘ” নামে একটি বিপ্লবী সংঘঠন ছিল। এই দলটি প্পকাশ্যে লাঠিখেলা, কুস্তি, ডনবৈঠক, মুষ্টিযুদ্ধশিক্ষা ইত্যাদির জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ক্লাব তৈরী করেছিল। ঢাকায় শ্রীসংঘের “দীপালী সঙ্ঘ” নামে একটি মহিলা শাখা ছিল। লীলা নাগ (বিয়ের পর লীলা রায়) এর নেতৃত্বে এই সংগঠনটি নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য কাজ করত। গোপনে তাঁরা মেয়েদের বিপ্লবী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ ও করত। ইডেন কলেজের শিক্ষক নীলিমাদির মাধ্যমে লীলা রায়ের সাথে প্রীতিলতার পরিচয় হয়েছিল। তাঁদের অনুপ্রেরণায় দীপালী সঙ্ঘে যোগ দিয়ে প্রীতিলতা লাঠিখেলা, ছোরাখেলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি লিখেছিলেন “আই এ পড়ার জন্য ঢাকায় দু’বছর থাকার সময় আমি নিজেকে মহান মাস্টারদার একজন উপযুক্ত কমরেড হিসাবে নিজেকে গডে তোলার চেষ্টা চালিয়েছি”। ১৯২৯ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে সূর্য সেন ও তাঁর সহযোগীরা চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের জেলা সম্মেলন, ছাত্র সম্মেলন, যুব সম্মেলন ইত্যাদি আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। নারী সম্মেলন করবার কোন পরিকল্পনা তখনও ছিলো না কিন্তু পূর্ণেন্দু দস্তিদারের বিপুল উৎসাহের জন্যই সূর্য সেন নারী সম্মেলন আয়োজনের সম্মতি দেন। মহিলা কংগ্রেস নেত্রী লতিকা বোসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রীতিলতা ঢাকা থেকে এবং তাঁর বন্ধু ও সহযোদ্ধা কল্পনা দত্ত কলকাতা থেকে এসে যোগদান করেন। তাঁদের দুজনের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল সূর্য সেনের অধীনে চট্টগ্রামের বিপ্লবী দলে যুক্ত হওয়ার কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তাঁদের ফিরে যেতে হয়। ১৯৩০ সালের ১৯ এপ্রিল আই এ পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন প্রীতিলতা। আগের দিন রাতেই চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের দীর্ঘ পরিকল্পিত আক্রমণে ধ্বংস হয় অস্ত্রাগার, পুলিশ লাইন, টেলিফোন অফিস এবং রেললাইন। এটি “চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ” নামে পরিচয় লাভ করে। চট্টগ্রামের মাটিতে বিপ্লবীদলের এই উত্থান সমগ্র বাংলার ছাত্রসমাজকে উদ্দীপ্ত করে। প্রীতিলতা লিখেছিলেন “পরীক্ষার পর ঐ বছরেরই ১৯শে এপ্রিল সকালে বাড়ি ফিরে আমি আগের রাতে চট্টগ্রামের বীর যোদ্ধাদের মহান কার্যকলাপের সংবাদ পাই। ঐ সব বীরদের জন্য আমার হৃদয় গভীর শ্রদ্ধায় আপ্লুত হল। কিন্তু ঐ বীরত্বপুর্ণ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে না পেরে এবং নাম শোনার পর থেকেই যে মাষ্টারদাকে গভীর শ্রদ্ধা করেছি তাঁকে একটু দেখতে না পেয়ে আমি বেদনাহত হলাম”।

ক্যাবলা'দা এবং গুণু পিসি


১৯৩০ সালে প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজে পড়তে আসেন। দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র। যুব বিদ্রোহের পর তিনি মধ্য কলকাতায় বিপ্লবী মনোরঞ্জন রায়ের পিসির (গুণু পিসি) বাসায় আশ্রয় নেন। প্রীতিলতা ঐ বাসায় গিয়ে দাদার সঙ্গে প্রায় দেখা করতেন। পূর্ণেন্দু দস্তিদার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলে মনোরঞ্জন রায় (ক্যাবলা’দা নামে পরিচিত) নারী বিপ্লবীদের সংগঠিত করার কাজ করেন। যুব বিদ্রোহের পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার এবং কারাগারে বন্দী নেতাদের সাথে আত্মগোপনে থাকা সূর্য সেনের সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ হত। তাঁরা তখন আরো হামলার পরিকল্পনা করছিল। সূর্য সেন প্রেসিডেন্সী কলেজের কেমিষ্ট্রির ছাত্র মনোরঞ্জন রায়কে গান-কটন এবং বোমা তৈরীর নির্দেশ দেন। তিনি এসব সংগ্রহ করে পলাতক বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা গুণু পিসির বাসায় রাখতেন। এ বাসায় বসে প্রীতিলতা, কল্পনা দত্ত, রেণুকা রায়, কমলা চ্যাটার্জী প্রমুখ বহু গোপন বৈঠক করেন এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের পর মাষ্টারদার প্রেরিত ইস্তেহার সাইক্লোষ্টাইলে ছাপিয়ে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে বিতরন করেন। মনোরঞ্জন রায়ের সাথে প্রীতিলতা এবং কল্পনা দত্তের পরিচয়ের পর তিনি বুঝতে পারেন যে এই মেয়ে দুটিই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপ্লবী কাজ করতে সক্ষম হবে। ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশের নজরদারী এড়িয়ে মনোরঞ্জন রায় কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম এসে সূর্য সেনের হাতে গান-কটন এবং বোমা তুলে দেন। এসময় তিনি জেলে থাকা বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ করে চিঠির আদান প্রদান এবং কলকাতা থেকে বিস্ফোরক বহন করে আনার বিপদ সম্পর্কে মাষ্টারদার দৃষ্টি আকর্ষন করেন। শহর আর গ্রামের যুবক বয়সীরা পুলিশের চোখে সবচেয়ে বড় সন্দেহভাজন। এ অবস্থায় সূর্য সেন নারী বিপ্লবীদের এসব কাজের দায়িত্ব দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কারণ তখনো গোয়েন্দা বিভাগ মেয়েদের সন্দেহ করতো না। মাষ্টারদার অনুমতি পাওয়ার পর নারীদের বিপ্লবের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় প্রীতিলতার ভাস্কর্য।

রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সান্নিধ্যে প্রীতিলতা


চট্টগ্রামে সূর্য সেনের কাছে বোমা পৌঁছে দিয়ে কলকাতা ফেরত আসার একদিন পরেই ২৪ নভেম্বর মনোরঞ্জন রায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।[৪৫] সে সময়ে টি জে ক্রেগ বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ পদে নতুন দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম সফরে আসেন। তাঁকে হত্যা করার জন্য মাষ্টার’দা রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে মনোনীত করলেন। পরিকল্পনা অনু্যায়ী ১৯৩০ সালের ২রা ডিসেম্বর চাঁদপুর রেলস্টেশনে তাঁরা রিভলবার নিয়ে আক্রমণ চালায় কিন্তু ভুল করে তাঁরা মিঃ ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এস ডি ও তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করেন। সেদিনেই পুলিশ বোমা আর রিভলবার সহ রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করে।[৪৬][৪৭] এই বোমাগু্লোই কলকাতা থেকে মনোরঞ্জন রায় চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। তারিণী মুখার্জি হত্যা মামলার রায়ে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের মৃত্যুদন্ড এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে নির্বাসন দন্ড দেয়া হয়।[৪৮] ব্যয়বহুল বলে আলিপুর জেলের ফাঁসির সেলে মৃত্যু গ্রহণের প্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণের সাথে চট্টগ্রাম থেকে আত্নীয়দের মধ্যে কেউ দেখা করতে আসা সম্ভব ছিল না। এ খবর জানার পর মনোরঞ্জন রায় প্রীতিলতার কাছে লেখা এক চিঠিতে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার চেষ্টা করতে অনুরোধ করেন। মনোরঞ্জন রায়ের মা হিজলী জেলে ছেলের সাথে দেখা করতে গেলে গোপনে তিনি প্রীতিলতাকে লেখা চিঠিটা তাঁর হাতে দেন।[৪৯] গুনু পিসির উপদেশ অনুযায়ী প্রীতিলতা মৃত্যুপ্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার জন্য আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষের কাছে “অমিতা দাস” ছদ্মনামে “কাজিন” পরিচয় দিয়ে দরখাস্ত করেন।[৫০] জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে তিনি প্রায় চল্লিশবার রামকৃষ্ণের সাথে দেখা করেন।[৫১] এ সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন “তাঁর (রামকৃষ্ণ বিশ্বাস) গাম্ভীর্যপুর্ণ চাউনি, খোলামেলা কথাবার্তা, নিঃশঙ্ক চিত্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা, ঈশ্বরের প্রতি অচলা ভক্তি, শিশুসুলভ সারল্য, দরদীমন এবং প্রগাঢ় উপলব্দিবোধ আমার উপর গভীর রেখাপাত করল। আগের তুলনায় আমি দশগুন বেশি কর্মতৎপর হয়ে উঠলাম। আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত এই স্বদেশপ্রেমী যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ আমার জীবনের পরিপূর্ণতাকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিল।”[৫২] ১৯৩১ সালের ৪ আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসী হয়।[২৬] এই ঘটনা প্রীতিলতার জীবনে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। তাঁর ভাষায় “রামকৃষ্ণদার ফাঁসীর পর বিপ্লবী কর্মকান্ডে সরাসরি যুক্ত হবার আকাঙ্ক্ষা আমার অনেক বেড়ে গেল।
দীর্ঘপ্রতীক্ষিত সময়ের অবসানঃ মাষ্টারদার সাথে সাক্ষাত


রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসীর পর আরো প্রায় নয় মাসের মতো প্রীতিলতাকে কলকাতায় থেকে যেতে হয় বি এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য।[৫২] পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে বাড়ি এসে দেখেন তাঁর পিতার চাকরি নাই। সংসারের অর্থকষ্ট মেটানোর জন্য শিক্ষকতাকে তিনি পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন।[৫৩] চট্টগ্রামে বিশিষ্ট দানশীল ব্যাক্তিত্ব অপর্ণাচরণ দে’র সহযোগিতায় তখন নন্দনকাননে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (বর্তমানে অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)। তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন।[৫৪] স্কুলে যাওয়া, প্রাইভেট পড়ানো, মাকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করে তাঁর দিনগুলো কাটছিল। কিন্তু তিনি লিখেছেন “১৯৩২ সালে বি এ পরীক্ষার পর মাষ্টারদার সাথে দেখা করবই এই প্রত্যয় নিয়ে বাড়ী ফিরে এলাম”।[৫২] বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্য সেনের সাথে সাক্ষাতের আগ্রহের কথা তিনি কল্পনা দত্তকে বলেন। প্রীতিলতা কলকাতা থেকে আসার এক বছর আগে থেকেই কল্পনা দত্ত বেথুন কলেজ থেকে বদলী হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে বি এস সি ক্লাসে ভর্তি হন। সেজন্য প্রীতিলতার আগেই কল্পনা দত্তের সাথে মাষ্টারদার দেখা হয়।[৫৫] ১৯৩১ সালে এই গোপন সাক্ষাতের সময় আত্মগোপনে থাকা মাষ্টারদার সাথে ছিলেন বিপ্লবী নির্মল সেন, তারকেশ্বর দস্তিদার, শৈলেশ্বর চক্রবর্তী এবং কালীকিংকর দে।[৫১] মাষ্টারদা ঐ সাক্ষাতের সময় কল্পনা দত্তের কাছ থেকে প্রীতিলতা সম্পর্কিত খোঁজ খবর জানতে চান।[৫৬] এরমধ্যে একবার মাষ্টারদার সংগঠন চালানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু অর্থের প্রয়োজন দেখা দিল। প্রীতিলতার বাবা সংসারের খরচ চালানোর জন্য মাসিক বেতনের পুরো টাকাটা প্রীতিলতার হাতে দিতেন। তিনি ঐ টাকাটা সংগঠনের কাজে দিয়ে দিতে চাইলেন। কিন্তু তা নিতে কল্পনা দত্ত আপত্তি করায় প্রীতিলতা কেঁদে বলেন “গরিব দেখে আমাদের টাকা নিতে চান না। আমি যে নিষ্ঠাবান কর্মী হতে পারব তার প্রমাণ করার সুযোগও কি আমায় দেবেন না?”।[৫৭][৫৮] প্রীতিলতার প্রবল আগ্রহের কারণেই কল্পনা দত্ত একদিন রাতে গ্রামের এক ছোট্ট কুটিরে তাঁর সাথে নির্মল সেনের পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৩২ সালের মে মাসের গোড়ার দিকে ঐ সাক্ষাতে নির্মল সেন প্রীতিলতাকে পরিবারের প্রতি কেমন টান আছে তা জানতে চাইলেন। জবাবে তিনি বলেন “টান আছে। কিন্তু duty to family-কে duty to country-র কাছে বলি দিতে পারব”।[৫৯] যুব বিদ্রোহের পর বিশৃঙ্খল হয়ে পড়া সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে মাষ্টারদা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কারণে প্রীতিলতার সাথে সে রাতে তাঁর দেখা হয়নি। প্রীতিলতার সাথে এই সাক্ষাতের কথা বলেতে গিয়ে মাষ্টারদা লিখেছেন “অল্প কয়েকদিন পরেই নির্মলবাবুর সঙ্গে আমার দেখা হতেই নির্মলবাবু আমায় বললঃ আমি রাণীকে (প্রীতিলতার ডাক নাম) কথা দিয়েছি আপনার সঙ্গে দেখা করাব, সে এক সপ্তাহের জন্য যে কোন জায়গায় আসতে রাজ়ী আছে। রামকৃষ্ণের সঙ্গে সে ফাঁসীর আগে দেখা করেছে শুনেই তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা হয়েছিল। তার দেখা করার ব্যাকুলতা শুনে রাজী হলাম এবং কয়েকদিনের মধ্যে (মে মাসের শেষের দিকে) তাকে আনার ব্যবস্থা করলাম”।[৫৬] মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতার প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনাতে মাষ্টারদা লিখেছেন “তার চোখেমুখে একটা আনন্দের আভাস দেখলাম। এতদূর পথ হেঁটে এসেছে, তার জন্য তার চেহারায় ক্লান্তির কোন চিহ্নই লক্ষ্য করলাম না। যে আনন্দের আভা তার চোখে মুখে দেখলাম, তার মধ্যে আতিশয্য নেই, Fickleness নেই, Sincerity শ্রদ্ধার ভাব তার মধ্যে ফুটে উঠেছে। একজন উচ্চশিক্ষিত cultured lady একটি পর্ণকুটিরের মধ্যে আমার সামনে এসে আমাকে প্রণাম করে উঠে বিনীতভাবে আমার দিকে দাঁড়িয়ে রইল, মাথায় হাত দিয়ে নীরবে তাকে আশীর্ব্বাদ করলাম..."।[৬০] রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে তার দেখা হও্য়ার ইতিবৃত্ত, রামকৃষ্ণের প্রতি তার শ্রদ্ধা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রীতিলতা প্রায় দুই ঘন্টার মতো মাষ্টারদার সাথে কথা বলেন। মাষ্টারদা আরো লিখেছেন “তার action করার আগ্রহ সে পরিষ্কার ভাবেই জানাল। বসে বসে যে মেয়েদের organise করা, organisation চালান প্রভৃতি কাজের দিকে তার প্রবৃত্তি নেই, ইচ্ছাও নেই বলে”। তিন দিন ধরে ধলঘাট গ্রামে সাবিত্রী দেবীর বাডিতে অবস্থানকালে আগ্নেয়াস্ত্র triggering এবং targeting এর উপর প্রীতিলতা প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন।
বিপ্লবী কর্মকান্ড
ধলঘাটে সংঘর্ষ
ধলঘাট সংঘর্ষের স্থানে নিহত বিপ্লবীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভের ধ্বংসাবশেষ।
## শহীদ মিনারের খুদাই করা অংশ।
পূর্ণেন্দু দস্তিদারের নির্মিত শহীদ মিনারের গায়ে মার্বেল পাথরের স্মৃতিফলক।
প্রীতিলতার স্মৃতিতে নির্মিত শহীদ মিনার।
## এই ছবিটি চট্টগ্রাম (বাংলাদেশ) এর পটিয়া থানার ধলঘাটে অবস্থিত ১৯৭০ সালে নির্মিত প্রীতিলতা ও অর্ধেন্দু দস্তিদার স্মরনে শহীদ মিনার এর স্থিরচিত্র । অর্ধেন্দু দস্তিদারের বড় ভাই পূর্ণেন্দু দস্তিদার এই শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এটি প্রীতিলতার জন্মস্থানের সন্মূখে নির্মাণ করা হয়। এই ছবিটি ধারন করার সময় শহীদ মিনারটিতে অবহেলা ও অযত্নের ছাপ স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।
Image may contain: 1 person, plant and outdoor
১৯৩২ সাল--চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের দুই বছর অতিক্রম হয়ে গেল। ইতোমধ্যে বিপ্লবীদের অনেকেই নিহত এবং অনেকেই গেপ্তার হয়েছেন। এই বছরগুলোতে আক্রমণের নানা পরিকল্পনার পরেও শেষ পর্যন্ত বিপ্লবীরা নুতন কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারে নাই। এসব পরিকল্পনার মূলে ছিলেন মাষ্টারদা এবং নির্মল সেন। এই দুজন আত্মগোপণকারী বিপ্লবী তখনো গ্রাম থেকে গ্রামে বিভিন্ন আশ্রয়স্থলে ঘুরে ঘুরে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন।এই আশ্রয়স্থলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর টিনের ছাউনি দেয়া মাটির দোতলা বাড়িটা।পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামটা ছিল বিপ্লবীদের অতি শক্তিশালী গোপন আস্তানা। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন এবং জালালাবাদ যুদ্ধের পর থেকে এই গ্রামে ছিলো মিলিটারি ক্যাম্প। এই ক্যাম্প থেকে সেনারা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনরত বিপ্লবীদের ধরার চেষ্টা করত।[৬৩] সাবিত্রী দেবীর বাড়ি ছিল ঐ ক্যাম্প থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। বিপ্লবীদের কাছে ঐ বাড়ির গোপন নাম ছিল “আশ্রম”।[৬৪] বিধবা সাবিত্রী দেবী এক ছেলে এবং বিবাহিতা মেয়েকে নিয়ে ঐ বাড়িতে থাকতেন।[৬৩] বিপ্লবীদের কাছে তিনি ছিলেন “সাবিত্রী মাসিমা”।[৬২] এই আশ্রমে বসে সূর্য সেন এবং নির্মল সেন অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে সাক্ষাত করতেন এবং আলোচনা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতেন। অনেক সময় এই বাড়িতেই তাঁরা দেশ বিদেশের বিপ্লবীদের লেখা বই পড়ে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখে সময় কাটাতেন। ১৯৩২ সালের ১২ জুন তুমুল ঝড় বৃষ্টির দিনে মাষ্টারদার পাঠানো এক লোক প্রীতিলতাকে আশ্রমে নিয়ে আসেন।[৬৪] বাড়িতে প্রীতিলতা তাঁর মাকে সীতাকুন্ড যাবার কথা বলেন। মাষ্টারদা এবং নির্মল সেন ছাড়া ঐ বাড়িতে তখন ডিনামাইট ষড়যন্ত্র মামলার পলাতক আসামী তরুন বিপ্লবী অপূর্ব সেন (ভোলা) অবস্থান করছিলেন। ১৩ জুন সন্ধ্যায় সূর্য সেন এবং তাঁর সহযোগীদের সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে অবস্থানের কথা পটিয়া পুলিশ ক্যাম্প জানতে পারে। এর আগে মে মাসেই ইংরেজ প্রশাসন মাষ্টারদা এবং নির্মল সেনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরিয়ে দিতে পারলে ১০,০০০ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন। ক্যাম্পের অফিসার-ইন-চার্জ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন খবরটা জানার পর ঐ বাড়িতে অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পুরস্কার এবং পদোন্নতির আশা নিয়ে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন দুজন সাব-ইন্সপেক্টর, সাতজন সিপাহী, একজন হাবিলদার এবং দুজন কনষ্টেবল নিয়ে রাত প্রায় ৯টার দিকে ধলঘাটের ঐ বাড়িতে উপস্থিত হন।[৬৫] এর একটু আগেই মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতা দোতলা বাড়িটার নীচতলার রান্নাঘরে ভাত খেতে বসেছিলেন। জ্বরের কারণে নির্মল সেন এবং ভোলা রাতের খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে উপরের তলায় শুয়ে ছিলেন। মাষ্টারদার সাথে খেতে বসে অস্বস্তি বোধ করায় প্রীতিলতা দৌড়ে উপরে চলে যান। প্রীতিলতার লজ্জা দেখে নির্মল সেন খুব হেসেছিলেন।এমন সময় মাষ্টারদা ঘরের ভিতরের মই বেয়ে দোতলায় উঠে বলেন “নির্মলবাবু, পুলিশ এসেছে”। মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে নিচে নেমে এসে মেয়েদের সাথে থাকার নির্দেশ দেন। ততক্ষনে সিপাহী এবং কনষ্টেবলরা ঘর ঘিরে ফেলেছে। ক্যাপ্টেন ক্যামেরন এবং সাব-ইন্সপেক্টর মনোরঞ্জন বোস ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ঘরের একতলায় থাকা সাবিত্রী দেবী ও তাঁর ছেলে মেয়েকে দেখতে পান। “ঘরে আর কে আছে?” এ প্রশ্ন করে কোন উত্তর না পাওয়া অভিযান পরিচালনাকারীরা এসময় ঘরের উপরের তলায় পায়ের আওয়াজের শব্দ শুনতে পান।[৬৭] ক্যাপ্টেন ক্যামেরন হাতে রিভলবার নিয়ে ঘরের বাইরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সিঁড়ির মাথায় পৌঁছে বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিতেই নির্মল সেনের করা দুইটা গুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন মৃত্যুবরন করেন। গুলির শব্দ পাওয়ার পরেই ঘরের চারিদিকে থাকা সৈন্যরা চারিদিক থেকে প্রচন্ড গুলিবর্ষণ শুরু করে। একটা গুলি এসে নির্মল সেনের বুকে লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরনে তাঁর মৃত্যু হয়। টাকা পয়সা এবং কাগজপত্র গুছিয়ে প্রীতিলতা এবং অপুর্ব সেনকে সঙ্গে নিয়ে মাষ্টারদা অন্ধকারে ঘরের বাইরে আসেন। এই সময়ে আমের শুকনো পাতায় পা পড়ার শব্দ পেয়ে আশেপাশে থাকা সিপাহীদের চালানো গুলিতে সবার আগে থাকা অপুর্ব সেন মারা যান। মাষ্টারদা আর প্রীতিলতা সেই রাতে কচুরিপানা ভরা পুকুরে সাঁতার কেটে আর কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে পটিয়ার কাশীয়াইশ গ্রামে দলের কর্মী সারোয়াতলী স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র মনিলাল দত্তের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছান।[৭২] মণিলাল ঐ বাড়ির গৃহশিক্ষক ছিলেন।[৭১] মাষ্টারদার জন্য রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত বিবরন লিখে ধলঘাটে এনেছিলেন প্রীতিলতা। সে পান্ডুলিপি পুকুরের মধ্যে হারিয়ে গেলো।[৭২] তাঁদেরকে নিরাপদ কোন আশ্রয়ে নিয়ে যেতে বলেন মাষ্টারদা। মণিলাল দত্ত তাদেরকে ধলঘাট হতে ছয় কিলোমিটার দূরে পাহাড়, জঙ্গল এবং নদীর কাছাকাছি একটা গ্রাম জৈষ্ট্যপুরায় নিয়ে যেতে মনস্থির করেন। পুলিশ আসলে পাহাড় এবং জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা যাবে অথবা নদী পার হয়ে অন্য আশ্রয়ে যাওয়া যাবে। অনেক প্রতিকূল পথ অতিক্রমের পর তাঁরা জৈষ্ট্যপুরা গ্রামে বিপ্লবীদের আরেকটা গোপন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছান।[৭২][৭৩] ঐ গুপ্ত আস্তানাটি বিপ্লবীদের কাছে “কুটির” নামে পরিচিত ছিল। ঐ কুটিরে তখন আত্মগোপণে ছিলেন সুশীল দে, কালীকিংকর দে এবং মহেন্দ্র চৌধুরী। সূর্য সেন পরের দিন প্রীতিলতাকে বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে সূর্য সেনের নির্দেশে মণিলাল প্রীতিলতার বাসায় পুলিশের নজরদারী আছে কিনা তা জানতে শহরে আসেন। “সব কিছু ঠিক আছে” জানার পর প্রীতিলতাকে বাড়ি গিয়ে স্কুল শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়। "চট্টগ্রামে সৈন্য ও বিপ্লবীদের সংঘর্য" শিরোনামে ধলঘাট সংঘর্ষের খবরটা ১৫ জুন ১৯৩২ সালে দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ঃ


"এইমাত্র সংবাদ আসিয়াছে যে, গতরাত্রে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার নিকটে বিপ্লবী ও সৈন্যদের এক সংঘর্য হইয়া গিয়াছে। ফলে গুর্খা বাহিনীর ক্যাপ্টেন ক্যামেরন ও দুইজন বিপ্লবী নিহত হইয়াছেন। বিপ্লবীদের নিকট দুইটি রিভলবার ও গুলি ইত্যাদি পাওয়া গিয়াছে। নিহত বিপ্লবীদের একজনকে নির্মল সেন বলিয়া সনাক্ত করা হইয়াছে।"


আত্মগোপন


ধলঘাট সংঘর্ষের সে রাতেই গোলাগুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরনের মৃত্যুর পর পুলিশের এস. আই মনোরঞ্জন বোস পটিয়ার মিলিটারী ক্যাম্পে গিয়ে আরো ত্রিশজন সৈন্য এবং একটা লুইস গান নিয়ে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে ফিরে আসেন। লুইস গানের গুলিবর্ষণে বাড়িটা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। সকালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও সেনাধ্যক্ষ মেজর গর্ডন দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। সাবিত্রী দেবী এবং তাঁর পুত্র কণ্যাকে বিপ্লবীদের আশ্রয় দেবার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। কণ্যা স্নেহলতার জবানবন্দিতে আরো তিন যুবক—দীনেশ দাশগুপ্ত, অজিত বিশ্বাস, এবং মনীন্দ্র দাশকে আটক করা হয়। পরবর্তীকালে সাবিত্রী দেবী, তাঁর পুত্র রামকৃষ্ণ, এবং এই তিন যুবককে বিপ্লবীদের আশ্রয় এবং সহায়তা করার দায়ে চার বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। ঘরের ভেতর চালানো তল্লাশীতে রিভলবার, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের দুইটা ছবি, পাশাপাশি দুইটা মেয়ের ছবি (যার মধ্যে একজন ছিল প্রীতিলতা) সহ কিছু চিঠি এবং দুইটা বইয়ের পান্ডুলিপি পাওয়া যায়।[৭৬] ধলঘাটে ছবি পাওয়ার পর ১৯ জুন পুলিশ বাসায় গিয়ে প্রীতিলতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।[৭৯] ২২ জুন এস.আই শৈলেন্দ্র সেনগুপ্ত এর নেতৃত্বে একটি দল ঐ বাড়িতে আরেক দফা তল্লাশি চালায়। তাঁর নির্দেশে আশে পাশের সব জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হয়। জঙ্গল এবং আশেপাশের পুকুরে তল্লাশীতে অনেক কাগজপত্র উদ্ধার করা হয় যা থেকে প্রমাণিত হয় চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের পর আত্মগোপনে থেকে ও বিপ্লবীরা তাঁদের আদর্শের সাথে অভিন্ন বিভিন্ন প্রবন্ধ পড়া এবং সামরিক প্রশিক্ষন চালিয়ে যাচ্ছিল। তল্লাশি অভিযানে কাজিন পরিচয় দিয়ে অমিতা দাশের (প্রীতিলতার) আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসির প্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে সাক্ষাতের হাতে লেখা একটা বিবরন পাওয়া যায়।[৮০][৮১] ঐ হাতের লেখার সাথে মেলানোর জন্য ৩০ জুন প্রীতিলতার বাসা থেকে পুলিশ তাঁর গানের একটা বই নিয়ে যায়। মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে আত্মগোপনের নির্দেশ দেন।[৭৯] ৫ জুলাই মনিলাল দত্ত এবং বীরেশ্বর রায়ের সাথে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে প্রীতিলতা আত্মগোপন করে। ছাত্রী পড়ানোর কথা বলে তিনি বাড়ি ত্যাগ করেছিলেন। পিতা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার অনেক খোঁজ খবর করেও কোন সন্ধান পাননি। ব্যর্থ হয়ে যখন থানায় খবরটা জানানো হল, পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর যোগেন গুপ্ত আরেক নারী বিপ্লবী কল্পনা দত্তের বাড়িতে যান। কল্পনা দত্ত ঐ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন “আমাদের বাসায় এসে গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর বলেঃ এত শান্তশিষ্ট নম্র মেয়ে ও, এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, ভাবতেও পারি না তার ভিতর এত কিছু আছে! আমাদের খুব ফাঁকি দিয়ে সে পালিয়ে গেল।”[৮২] চট্টগ্রাম শহরের গোপন আস্তানায় কিছু দিন কাটিয়ে প্রীতিলতা পড়ৈকড়া গ্রামের রমণী চক্রবর্তীর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বিপ্লবীদের আরেক গোপন আস্তানা এই বাড়িটার সাংকেতিক নাম ছিল “কুন্তলা”।[৮৩] এই বাড়িতে তখন আত্মগোপনে ছিলেন মাষ্টারদা এবং তারকেশ্বর দস্তিদার। প্রীতিলতার আত্মগোপনের খবর ১৩ জুলাই ১৯৩২ আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। “চট্টগ্রামের পলাতকা” শিরোনামের এই সংবাদে লেখা হয় “চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার ধলঘাটের শ্রীমতী প্রীতি ওয়াদ্দাদার গত ৫ই জুলাই, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শহর হইতে অন্তর্ধান করিয়াছেন। তাঁহার বয়স ১৯ বৎসর। পুলিশ তাঁহার সন্ধানের জন্য ব্যস্ত”।[৮৪] প্রীতিলতাকে ধরার জন্য বেঙ্গল পুলিশের সি আই ডি কর্তৃক প্রকাশিত ছবিসহ নোটিশটি ছিল নিম্নরূপঃ[৮৫]


"Waddadar, whose photographs are published above. Photograph No 1 was taken 2 years ago when Miss Prithi was a student of the Dacca Eden Intermediate College and photograph No. 2 (sitting postures), which is a more recent one, was found at the time of search of one Apurba Sen alias Bhola (since deceased), in connection with Dhalghat shooting affray at Chittagong.


A Special “look-out” should be kept for her and when traced, the I.B., C.I.D., Bengal, Calcutta, should be informed by wire. A close, though unobtrusive, surveillance should at the same time be kept on her movements.


Description—Miss Prithi Waddadar, daughter of Jagabandhu Waddadar (Baidya by caste), of Dhalghat, Patiya and Jamalkhana, Chittagong town: age 20/21 (looks younger than her age); dark; medium build; short; ugly in appearance."

ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ
তৎকালীন ইউরোপিয়ান ক্লাব।
ইউরোপিয়ান ক্লাবের সম্মুখের স্মৃতিফলক।

১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ। কিন্তু গুড ফ্রাইডের কারণে সেদিনের ঐ পরিকল্পনা সফল করা যায়নি। চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে এই ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র। পাহাড় ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে প্রহরীদের অবস্থান ছিল। একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা ব্যতীত এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয়-বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এদেশীয় কেউ ঐ ক্লাবের ধারে কাছে যেতে পারতো না।[৬৪] ক্লাবের সামনের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল “ডগ এন্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড”।[৮৬] সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাস করতো। আত্মগোপনকারী বিপ্লবীরা ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের জন্য নুতনভাবে পরিকল্পনা শুরু করে। চট্টগ্রাম শহরের কাছে দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে ঐ ক্লাবেরই একজন বেয়ারা যোগেশ মজুমদারের বাড়িতে বিপ্লবীরা আশ্রয় পেলেন।[৮৪] ১৯৩২ এর ১০ আগষ্ট ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দিন ধার্য করা হয়। শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সাতজনের একটা দল সেদিন ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর প্রতিজ্ঞা ছিল ক্লাব আক্রমণের কাজ শেষ হবার পর নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার যদি সুযোগ থাকে তবুও তিনি আত্মবিসর্জন দেবেন। তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। গভীর রাতে কাট্টলীর সমুদ্রসৈকতে তাঁর মৃতদেহ সমাহিত করা হয়।মাষ্টারদা ১৯৩২ এর সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাবে হামলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই আক্রমণের দায়িত্ব তিনি নারী বিপ্লবীদের উপর দেবেন বলেন মনস্থির করেছিলেন। কিন্তু সাতদিন আগেই পুলিশের হাতে পুরুষবেশী কল্পনা দত্ত ধরা পরে গেলে আক্রমণে নেতৃত্বের ভার পড়ে একমাত্র নারী বিপ্লবী প্রীতিলতার উপর।[৭৯][৮৯] ২৩ সেপ্টেম্বর এ আক্রমণে প্রীতিলতার পরনে ছিল মালকোঁচা দেওয়া ধুতি আর পাঞ্জাবী, চুল ঢাকা দেবার জন্য মাথায় সাদা পাগড়ি, পায়ে রবার সোলের জুতা। ইউরোপীয় ক্লাবের পাশেই ছিল পাঞ্জাবীদের কোয়ার্টার। এর পাশ দিয়ে যেতে হবে বলেই প্রীতিলতাকে পাঞ্জাবী ছেলেদের মত পোশাক পড়ানো হয়েছিল। আক্রমণে অংশ নেয়া কালীকিংকর দে, বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস, শান্তি চক্রবর্তী পোষাক ছিল ধুতি আর শার্ট। লুঙ্গি আর শার্ট পরনে ছিল মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেন এর। বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার (বিপ্লবীদের দেয়া তাঁর গোপন নাম ছিল জয়দ্রথ) ক্লাবের ভিতর থেকে রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ এর দিকে আক্রমণের নিশানা দেখানোর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন ছিল শনিবার, প্রায় চল্লিশজন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল। তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করে। পূর্বদিকের গেট দিয়ে ওয়েবলি রিভলবার এবং বোমা নিয়ে আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা, শান্তি চক্রবর্তী আর কালীকিংকর দে। ওয়েবলি রিভলবার নিয়ে সুশীল দে আর মহেন্দ্র চৌধুরী ক্লাবের দক্ষিণের দরজা দিয়ে এবং ৯ ঘড়া পিস্তল নিয়ে বীরেশ্বর রায়, রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে পান্না সেন আর প্রফুল্ল দাস ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন। প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেবার পরেই ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে কেঁপে উঠছিল। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাবার কারণে সবাই অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে লাগল। ক্লাবে কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের কাছে রিভলবার ছিল। তাঁরা পাল্টা আক্রমণ করল। একজন মিলিটারী অফিসারের রিভলবারের গুলিতে প্রীতিলতার বাঁ-পাশে গুলির আঘাত লাগে। প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী দলটার সাথে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী সেদিনের এই আক্রমণে মিসেস সুলিভান নামে একজন নিহত হয় এবং চারজন পুরুষ এবং সাত জন মহিলা আহত হয়।
মৃত্যু এবং অতঃপর ইউরোপিয়ান ক্লাবের পাশের এই স্থানে প্রীতিলতা আত্মাহুতি দেন।

পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন। কালীকিংকর দে’র কাছে তিনি তাঁর রিভলবারটা দিয়ে আরো পটাশিয়াম সায়ানাইড চাইলে, কালীকিংকর তা প্রীতিলতার মুখের মধ্যে ঢেলে দেন।
বাংলা ভাষার উইকিসংকলনে এই নিবন্ধ বা অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত মৌলিক রচনা রয়েছে: মায়ের কাছে প্রীতিলতার শেষ পত্র

ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে অংশ নেয়া অন্য বিপ্লবীদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রীতিলতা। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে বিপ্লবী শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই স্থান ত্যাগ করে। পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে পরবর্তীতে প্রীতিলতাকে সনাক্ত করেন। তাঁর মৃতদেহ তল্লাশীর পর বিপ্লবী লিফলেট, অপারেশনের পরিকল্পনা, বিভলবারের গুলি, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি এবং একটা হুইসেল পাওয়া যায়। ময়না তদন্তের পর জানা যায় গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড ছিল তাঁর মৃত্যুর কারণ।


বেঙ্গল চিফ সেক্রেটারী প্রীতিলতার মৃত্যুর পর লন্ডনে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো একটা রিপোর্টে লেখেনঃ

"Pritilata had been closely associated with, if not actually the mistress of, the terrorist Biswas who was hanged for the murder of Inspector Tarini Mukherjee, and some reports indicate that she was the wife of Nirmal Sen who was killed while attempting to evade arrest of Dhalghat, where Captain Cameron fell."

প্রীতিলতার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের অবস্থা নিয়ে কল্পনা দত্ত লিখেছেনঃ “প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে'। তাঁদের দুঃখের পরিসীমা ছিল না, তবু তিনি সে দুঃখেকে দুঃখ মনে করেননি। ধাত্রীর কাজ নিয়ে তিনি সংসার চালিয়ে নিয়েছেন, আজো তাঁদের সেভাবে চলছে। প্রীতির বাবা প্রীতির দুঃখ ভুলতে পারেননি। আমাকে দেখলেই তাঁর প্রীতির কথা মনে পড়ে যায়, দীর্ঘনিশ্বাস ফেলেন”।

কল্পনা দত্ত ১৯৩০ সালে প্রীতিলতার বাড়িতে এক আলাপচারিতা প্রসঙ্গে লিখেছেনঃ “কথা হচ্ছিল, পাঁঠা কাটতে পারব কি না। আমি বলেছিলাম, ‘নিশ্চয় পারব, আমার মোটেই ভয় করে না’। প্রীতি উত্তর দিয়েছিল ‘ভয়ের প্রশ্ন না, কিন্তু আমি পারব না নিরীহ একটা জীবকে হত্যা করতে’। একজন তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন করল ‘কী, দেশের স্বাধীনতার জন্যও তুমি অহিংস উপায়ে সংগ্রাম করতে চাও?’ আমার মনে পড়ে প্রীতির স্পষ্ট জবাব, ‘স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতেও পারব, প্রাণ নিতে মোটেই মায়া হবে না। কিন্তু নিরীহ জীব হত্যা করতে সত্যি মায়া হয়, পারব না।’”


প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দের নামেও পরিচিত (জন্ম: মে ৫, ১৯১১; মৃত্যু সেপ্টেম্বর ২৪, ১৯৩২) ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার, একজন বাঙালী ছিলেন, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ ব্যক্তিত্ব। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন করেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন।এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো "কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ"। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তিতে পুলিশ তাদের আটক করে। পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড গলাধঃকরন করে আত্মহত্যা করেন।
প্রীতিলতার জন্মস্থানের ধ্বংসাবশেষ। ভিটা বাড়ীর কোন চিহ্নই আর অবশিষ্ট নেই।

শৈশব

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভাদেবী। তাঁদের ছয় সন্তানঃ মধুসূদন, প্রীতিলতা, কনকলতা, শান্তিলতা, আশালতা ও সন্তোষ। তাঁদের পরিবারের আদি পদবী ছিল দাশগুপ্ত। পরিবারের কোন এক পূর্বপুরুষ নবাবী আমলে “ওয়াহেদেদার” উপাধি পেয়েছিলেন, এই ওয়াহেদেদার থেকে ওয়াদ্দেদার বা ওয়াদ্দার। শৈশবে পিতার মৃত্যুর পর জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার তাঁর পৈতৃক বাড়ি ডেঙ্গাপাড়া সপরিবারে ত্যাগ করেন। তিনি পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হয়েছেন। এই বাড়িতেই প্রীতিলতার জন্ম হয়। আদর করে মা প্রতিভাদেবী তাঁকে “রাণী” ডাকতেন। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম শহরের আসকার খানের দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে টিনের ছাউনি দেয়া মাটির একটা দোতলা বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকতেন ওয়াদ্দেদার পরিবার। অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের প্রীতিলতা ছেলেবেলায় ঘর ঝাঁট দেওয়া, বাসন মাজা ইত্যাদি কাজে মা-কে সাহায্য করতেন।


শিক্ষাজীবন
প্রীতিলতার ম্যাট্রিকুলেশন পাশের সনদ।


ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা বিদ্যালয় ছিল প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৮ সালে তিনি এই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন।[১৪] প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য তিনি সব শিক্ষকের খুব প্রিয় ছিলেন। সেই শিক্ষকের একজন ছিলেন ইতিহাসের ঊষাদি। তিনি প্রীতিলতাকে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রানী লক্ষীবাই এর ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের ইতিহাস বলতেন। স্কুলে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিলেন কল্পনা দত্ত (পরবর্তীকালে বিপ্লবী)। এক ক্লাসের বড় প্রীতিলতা কল্পনার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতেন।তাঁদের স্বপ্নের কথা লিখেছেন কল্পনা দত্তঃ "কোন কোন সময় আমরা স্বপ্ন দেখতাম বড় বিজ্ঞানী হব। সেই সময়ে ঝাঁসীর রানী আমাদের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে। নিজেদেরকে আমরা অকুতোভয় বিপ্লবী হিসাবে দেখা শুরু করলাম।"স্কুলে আর্টস এবং সাহিত্য প্রীতিলতার প্রিয় বিষয় ছিলো।১৯২৬ সালে তিনি সংস্কৃত কলাপ পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। অঙ্কের নম্বর খারাপ ছিল বলে তিনি বৃত্তি পাননি।ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর বন্ধের সময় তিনি নাটক লিখেন এবং মেয়েরা সবাই মিলে সে নাটক চৌকি দিয়ে তৈরী মঞ্চে পরিবেশন করেন। পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ার সময়টাতে তাঁর বাড়িতে এক বিয়ের প্রস্তাব আসে। কিন্তু প্রীতিলতার প্রবল আপত্তির কারণে বিয়ের ব্যবস্থা তখনকার মতো স্থগিত হয়ে যায়।আই.এ. পড়ার জন্য তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজ়ের ছাত্রী নিবাসের মাসিক থাকা খাওয়ার খরচ ছিল ১০ টাকা এবং এর মধ্যে কলেজের বেতন ও হয়ে যেত। এ কারণেই অল্প বেতনের চাকুরে জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার মেয়েকে আই.এ. পড়তে ঢাকায় পাঠান। ১৯৩০ সালে আই.এ. পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করে। এই ফলাফলের জন্য তিনি মাসিক ২০ টাকার বৃত্তি পান এবং কলকাতার বেথুন কলেজ়ে বি এ পড়তে যান। বেথুন কলেজে মেয়েদের সাথে তাঁর আন্তরিক সম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। বানারসী ঘোষ স্ট্রীটের হোস্টেলের ছাদে বসে প্রীতিলতার বাশীঁ বাজানো উপভোগ করত কলেজের মেয়েরা।প্রীতিলতার বি.এ. তে অন্যতম বিষয় ছিল দর্শন। দর্শনের পরীক্ষায় তিনি ক্লাসে সবার চাইতে ভাল ফলাফল লাভ করতেন। এই বিষয়ে তিনি অনার্স করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিপ্পবের সাথে যুক্ত হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে অনার্স পরীক্ষা তাঁর আর দেয়া হয়নি। ১৯৩২ সালে ডিসটিংশান নিয়ে তিনি বি.এ. পাশ করেন।কিন্তু, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় কৃতিত্বের সাথে স্নাতক পাস করলেও তিনি এবং তাঁর সঙ্গী বীণা দাসগুপ্তর পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখা হয়। অবশেষে তাঁদেরকে ২২ মার্চ, ২০১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয়।

Monday 19 February 2018

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের কতটুকু আপনার জানা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের কতটুকু আপনার জানা। আপনি জেনেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মেনে চলেন নাকি অন্যের নিকট শুনে বিশ্বাস আত্মবিশ্বাসে মুজিবসেনা বলে নিজেকে দাবী করেন? 

একটু সময় নিয়ে মিলিয়ে নিন। ১৯৩৮-১৯৭৫ পর্যন্ত।
 জন্ম: ১৯২০ সালের সতের মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে।
১৯৩৮ সালে তৎকালীন বাংলার শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে পরিচয় ও সাহচর্য লাভ।
" " মিথ্যা অভিযোগে প্রথম বারের মত গ্রেপ্তার, সাতদিন পর জামিন লাভ।
১৯৩৯ সালে সোহরাওয়ার্দীর সাথে কলকাতায় যোগাযোগ, গোপালগঞ্জ মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলীম লীগ গঠন। শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক হন।
১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পাশ।
" " কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে র্ভতি।
১৯৪৩ সালে প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য হন।
১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলীম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। সোহরাওয়ার্দী সাহেব প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৪৬ সালের জুলাইয়ে কলকাতা ও বিহারে হিন্দু মুসলমান দাংগা বন্ধে ও আহতদের পূর্নবাসনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন।
১৯৪৭ এ পাকিস্তান ভাগের সময় আসামের জেলা সিলেটকে বাংলাদেশে রাখার বিষয়ে গনভোটে সক্রিয় কার্যক্রম চালান।
" " ব্যারাক পুরে মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাক্ষাত, তাকে কলকাতা-বিহার দাংগায় তোলা নৃশংস হত্যাকান্ডের ছবি এলবাম আকারে উপহার প্রদান।
" " কলকাতা ত্যাগ, ঢাকায় আগমন।
" " ঢাকায় কনফারেন্স, যুব প্রতিষ্ঠান গড়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত, নাম গণতান্ত্রিক যুবলীগ, সাবজেক্ট কমিটি গঠন। শেখ মুজিব কমিটির সদস্য। পরবর্তীতে কমিউনিস্টদের
অনৈতিক সংখ্যাধিক্য ও বাড়াবাড়ির কারণে শেখ মুজিব সহ মুসলিম লীগ পন্থীরা সংগঠন ত্যাগ করেন।
১৯৪ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ গঠন। (তখনও মুসলিম লীগের সদস্য থাকায় নিজে দায়িত্ব নেননি, তবে তিনিই প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন) নইমউদ্দিন কনভেনর হলেও মুল দায়িত্ব ছিল
বঙ্গবন্ধুর উপর। এক মাসের মধ্যে প্রায় সকল জেলায় কমিটি গঠন।
"" " মুসলিম লীগ ত্যাগ।
১৯৪৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী করাচিতে পাকিস্তান সংবিধান কমিটির সভায় উদুর্কে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে আলোচনা। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিবাদ সভা।
" " পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিসের যুক্ত ভাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠন।
" " ফরিদপুর, যশোর হয়ে দৌলতপুর, খুলনা ও বরিশাল সহ জেলায় জেলায় ছাত্রসভায় বক্তব্য প্রদান করেন।
" " ১১ মার্চ বাংলা ভাষা দিবস পালনের দায়ে মিছিলে লাঠিচার্জের শিকার ও দ্বিতীয় বারের মত গ্রেপ্তার হন। পাঁচদিন জেলে থাকেন।
" " ১৫ তারিখ মুক্তি লাভ, ১৬ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্রসভায় প্রথমবারের মত সভাপতিত্ব করেন।
" " টাংগাইলে দুটো আইনসভার আসন খালী হওয়ায় মুসলীম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য মওলানা ভাসানীর সাথে আলোচনা। মওলানা ভাসানী খাজা নাজিমউদ্দীনের সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে নির্বাচন করেন। পরে মওলানা ভাসানীর আসন নির্বাচনী হিসেব দাখিল না করার অপরাধে বাতিল হয়।
" " টাংগাইল ও নারায়ন গন্জে মাওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে সভা। শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ঢাকায় আগমন ও বিভিন্ন জায়গায় সভা।
১৯৪৯ সাল
বিশ্ববিদ্যালয়ে নিন্ম বেতনভোগী কর্মচারীদের আন্দোলনে সংহতি ও সহযোগিতা
**** আন্দোলনে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত
**** পুরোনো লীগ কর্মী ও নেতাদের সাথে আলোচনা। নতুন দল গঠন করা যায় কিনা এ ব্যাপারে। নেতার সংকট। আসাম ফেরত মওলানা ভাসানীর সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত। আসাম ময়মনসিংহ, পাবনা ও রংপুরে তিনি পরিচিত হলেও পূর্ব বাংলার সাধারণ জনগণ তাকে তেমন জানতনা। কারণ তিনি বেশিরভাগ সময় আসামেই কাটিয়েছেন। মুসলীম লীগের নেতা হিসেবে আসামের বাংগাল খেদাও আন্দোলনের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছিলেন। অন্যদিকে সীমান্ত প্রদেশে পীর মানকি শরীফ আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে সংগঠন গঠন করেছেন।
*** ছাত্রলীগের কনভেনর নইমউদ্দিন বন্ড দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রত্ব ফেরত। সভার মাধ্যমে তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার। (সম্ভবত শেখ মুজিব ছাত্রলীগের সভাপতি হন আমি নিশ্চিত নই) শাস্তিমুলক বহিস্কার প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষনা।
*** টাংগাইল উপনির্বাচনে শামসুল হককে প্রার্থী ঘোষনা (নিবার্চনে প্রথমবারের মত মুসলীম লীগের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে তিনি জয়লাভ করেন)। একদিকে নির্বাচন অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন। দুদিকেই শেখ মুজিবের ব্যস্ততা।
***** ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট, বিকালে ভাইস চ্যান্সেলরের বাড়ি ঘেরাও। ১৯ তারিখ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।
*** নিবার্চিত হয়ে শামসুল হক ঢাকায় আসার পর ২৩ জুন হুমায়ুন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে মুসলীম লীগের পুরোন কর্মীরা মিলে সভা করেন। অনেক পুরোন নেতা এবার মাঠে নামেন। যাদের মধ্যে শেরে বাংলা, মওলানা ভাসানী, মওলানা রাগীব আহসান এমএলএ দের মধ্যে খয়রাত হোসেন, আনোয়ারা খাতুন, আলী আহমদ খান, হাবিবুর রহমান যোগ দেন। শেখ মুজিব জেল থেকে খবর পাঠান "মুসলীম লীগের পিছনে ঘুরে লাভ নাই, তারা দলে নিতে চাইলেও আর যাওয়া উচিত হবেনা, ছাত্র রাজনীতি আর করবোনা, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানই করবো, কারণ বিরোধী দল না থাকলে এদেশে একনায়কত্ব চলবে।"
### কর্মী সভায় নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্টান গঠনের সিদ্ধান্ত। নাম: পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক হন।
### জেল থেকে বের হওয়ার পর গোপাল গঞ্জে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জনসভা। সরকারের বাধাঁ। ১৪৪ ধারা জারী, মসজিদ থেকে বঙ্গবন্ধু পুনরায় গ্রেফতার রাতে জামিন। আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়ার পর ঢাকার বাইরে এটাই প্রথম জনসভা।
### (আইনের ছাত্র বঙ্গবন্ধু আর আইন পড়বেনা শুনে শুনে শেখ মুজিবের পিতা কষ্ট পান। তিনি বলেন, ঢাকায় না পড়তে চাইলে বিলেত গিয়ে পড়তে। যদি দরকার হয় জমি বিক্রি করে টাকা দিবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, এখন বিলেত গিয়ে কি হবে, অর্থ উপার্জন আমি করতে পারবনা" । শেখ মুজিবের জেদ হয়েছিল মুসলিম লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলেন তার উল্ট হয়েছে। এর একটা পরিবর্তন দরকার। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কিছুই নাই। সব পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শেখ মুজিবের পিতা বললেন, আমাদের জন্য কিছু করতে হবেনা। তুমি বিবাহ করেছ, তোমার মেয়ে হয়েছে তাদের জন্য তো কিছু করা দরকার। বঙ্গবন্ধু বললেন, আপনি তো আমাদের জন্য জমিজমা যথেস্ট করেছেন, যদি কিছু করতে না পারি বাড়ি চলে আসব। তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া চলতে পারেনা। (শেখ মুজিবের স্ত্রী নিজে কষ্ট করেও শেখ মুজিবের জন্য সব সময় টাকা জমিয়ে রাখতেন। ইত্তেহাদের সাংবাদিক হিসেবে কিছু টাকা পেতেন। উনার অন্য কোন আয়ের উৎস ছিলনা। )
### ঢাকায় ফিরে ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন করেন। ছাত্রলীগ থেকে অবসর।
### আওয়ামলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ম্যানিফেস্টো ও গঠনতন্ত্র নিয়ে কয়েকদিন ধরে আলোচনা। (শামসুল হক সাহেবের সাথে মাওলানা ভাসানীর তর্ক, শামসুল হক সাহেব মওলানা ভাসানীকে বলেন: এ সমস্ত আপনি বুঝবেন না। কারণ এ সমস্ত জানতে হলে অনেক শিক্ষার প্রয়োজন, তা আপনার নাই। )মাওলানা ভাসানীকে দায়িত্ব দেয়া হয়ে ওয়াকিঙ কমিটির সদস্য মনোনয়ন দেয়ার। তিনি এমন অনেককেই মনোনয়ন দেন যাদের চেনা জানা পর্যন্ত নেই।
### প্রতিষ্ঠানের কাজে আত্মনিয়োগ, জামালপুর মহকুমায় প্রথম সভা। ১৪৪ ধারা জারী। মাওলানা ভাসানী সাহেব বক্তব্য বাদ দিয়ে মোনাজাত শুরু করলেন। মোনাজাতে যা কিছু বলার বলে ফেললেন।### সভায় মাওলানা ভাসানীকে বাদ দিয়ে শামসুল হক সাহেবকে দিয়ে সভাপতিত্ব করানোয় মাওলানা ভাসানী রাগ করলেন। তিনি রাতে ভাত খাবেন না। তাকে নাকি অপমান করা হয়েছে। ( বঙ্গবন্ধু এ ব্যাপারে লিখেছেন: এই দিন আমি বুঝতে পারলাম মাওলানা ভাসানীর উদারতার অভাব। তবুও তাকে আমি ভক্তি শ্রদ্ধা করতাম। কারন তিনি জনগণের জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন। যেকোন মহৎ কাজ করতে হেল ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয় তার জীবনে কোন ভাল কাজ করতে পারে নাই।)
### ঢাকায় আরমানিটোলা ময়দানে জনসভায় বক্তব্য প্রদান।
### শামসুল হক সাহেবের সাথে মাওলানা সাহেবের মনমালিন্য শুরু হয় জামালপুরের ঘটনার পর থেকেই। মাওলানা সাহেব সুযোগ পেলেই একে তাকে শামসুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে বলতেন। শামসুল হক সাহেবের বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছিল। তিনি বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় পার্টির সমস্ত দায়িত্ব শেখ মুজিবের কাধেঁ এসে পড়ে।
### ১১ অক্টোবর লিয়াকত আলী খান ঢাকায় আসবেন, শেখ মুজিব মওলানা ভাসানীর নামে সাক্ষাৎ করতে চেয়ে একটি টেলিগ্রাম দেন। টেলিগ্রামের উত্তর দেননি লিয়াকত আলী খান। সাংবাদিকদের বলেন আওয়ামীলীগ কি তিনি জানেন না। ### ১১ অক্টোবর আরমানীটোলায় বিরাট সভা আহ্বান করা হয়। শেষ বক্তা হিসেবে বঙ্গবন্ধু বক্তৃতা করেন। উনার আহ্বানে লিয়াকত আলী খানের উদ্দেশ্য মিছিল বের করা হয়। মিছিলে পুলিশ লাটিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস ছাড়ে। শেখ মুজিব আহত হয়ে নদর্মায় পড়ে থাকেন। পড়ে উনাকে বেহুশ অবস্থায় মোগলটুলি অফিসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পুলিশ রাতে ঘেরাও করলে পালানোর জন্য আহত অবস্থায় তিনতলা থেকে দোতলায় লাফ দেন। কয়েকদিন এদিক সেদিক লুকিয়ে থাকেন। পরে ভাসানী সাহেব উনাকে পাকিস্তান যেতে বলেন সোহরাওয়ার্দী ও মিয় ইফতিখার উদ্দীনের সাথে দেখা করার জন্য। উদ্দেশ্য নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠন। শেখ মুজিব পাকিস্তান যান। সেখানে সোহরাওয়ার্দীর সাথে দেখা করেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিবৃতি দেন। আওয়ামীলীগের কথা পত্র পত্রিকায় ছাপানো হয়।
##### পাকিস্তানে একমাস থেকে, দিল্লী হয়ে দেশে ফিরে আসেন। কলকাতায় ও গোপালগঞ্জে পুলিশের চোখ এড়িয়ে বাড়ি আসেন। (গ্রেফতারী পরোয়ান ঝুলছিল) । পরে বরিশাল নারায়নগঞ্জ হয়ে ঢাকায় আসেন। শওকত আলীর নিকট খবর পান মাওলানা সাহেব যাদের কার্যকরী কমিটির সদস্য করেছিলেন তাদের মধ্যে থেকে বার তেরজন ভয়ে পদত্যাগ করেছেন। অনেক পুরোন যারা ছিলেন তারা বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও এডভোকেট জেনারেলের চাকরী নিয়ে আওয়ামীলীগ থেকে পদত্যাগ করেন। এসময় কয়েকজন ছাড়া আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আর তেমন কেউ রইলনা। বঙ্গবন্ধু আবদুল হামিদ চৌধুরীর বাড়িতে উঠেন। কয়েকদিন পর সেখান থেকে আবার গ্রেফতার হন। তখন ১৯৪৯ এর ডিসেম্বর। জেলে ভাসানী, শামসুল হক, শেখ মুজিব একই সেলে ছিলেন। আওয়ামী লীগের মেরুদন্ড গুড়িয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগে সরকার।
#### ১৯৫০ সালের শেষের দিকে মাওলানা ভাসানী ও শামসুল হক মুক্তি পান। শেখ মুজিবকে গোপালগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৫১ সালের শেষ দিকে আবার ঢাকা জেলে নিয়ে আসা হয়। অসুস্থ থাকায় জেল কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবকে হাসপাতালে রাখেন।(শহীদ সাহেব পুর্ব বাংলায় এসে ভাসানীর সাথে মিলে বিভিন্ন জায়গায় সভা করেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্যও দাবী জানান।)
###লিয়াকত আলীর মৃত্যুর পর খাজা নাজিমউদ্দীন প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৫২ সালে তিনি পল্টনের এক জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষনা দেন। ছাত্রলীগ নেতারা শেখ মুজিবের সাথে গোপনে হাসপাতালে দেখা করেন। বঙ্গবন্ধু তাদের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করতে বলেন।
###১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে শেখ মুজিব ও মুক্তির দাবীতে অনশন করার ঘোষনা দেন। ১৫ ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিবকে ফরিদপুর জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ১৬ তারিখ থেকে অনশন শুরু করেন। খাওয়া দাওয়া সর্ম্পুন বন্ধ করে দেন। চার দিন পর জেল কর্তৃপক্ষ নাকে নল দিয়ে খাওয়াতে শুরু করে। ২৫ তারিখ ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে মৃত্যুপথযাত্রী শেখ মুজিবকে দেখে মুখ কালো করে ফেলেন। ২৭ তারিখ শেখ মুজিবের মুক্তির আদেশ আসে। একটানা প্রায় আড়াই বছর জেলে কাটিয়ে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
###এক মাস বাড়িতে কাটিয়ে ঢাকায় আসেন। আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটির সভায় শেখ মুজিবকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। মাওলানা ভাসানী ও শামসুল হক তখন জেলে ছিলেন। বাংলা ভাষা দাবী ও রাজবন্দীদের মুক্তির দাবী জানিয়ে প্রেস কনফারেন্স।
### পাকিস্তানে গিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ। জেল বন্দিদের মুক্তি দাবী।
###পাকিস্তানে প্রেস কনফারেন্স করেন, সেখানে বলেন ত্রিশটা আসনে উপনির্বাচনে বন্ধ রয়েছে। যেকোন একটায় নির্বাচন দিতে বলূন। আমরা মুসলীম লীগ প্রার্থীকে শোচনীয় ভাবে পরাজিত করতে সক্ষম।
### শহীদ সাহেবের সাথে দেখা করেন এবঙ সেখানে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের এফিলিয়েশন নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়।
### লাহোর থেকে ঢাকায়। ওয়ার্কিঙ কমিটির সভা আহ্বান। মাওলানা সাহেব অসুস্থ অবস্থায় জেলে। শেখ মুজিব জেলায় জেলায় সভা ও সংগঠন দৃড় করার কাজে নেমে পড়লেন।
## ২৪ সেপ্টেম্বর পিকিং এ শান্তি সম্মেলনে যাত্রা। দীর্ঘ চীন সফর শেষে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন। মাওলানা সাহেব তখনও জেলে। পল্টন ময়দানে বিরাট জনসভায় বক্তব্য প্রদান।
#১৯৫৩ সালে শামসুল হক মুক্তি পেলেন। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। শেখ মুজিব তখন একাই কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। জেলা উপজেলা ছাড়াও দেশের শতকরা সত্তর ভাগ ইউনিয়ন কমিটিও গঠিত হয়ে গেল। এরই মধ্যে মাওলানা ভাসানীও ছাড়া পেয়েছেন। এরপর আওয়ামীলীগের কাউন্সিল সভার আয়োজন শুরু হল।
## কাউন্সিলে মাওলানা ভাসানী সভাপতি, শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৩ সালের মাঝামাঝিতে সাধারণ নির্বাচন ঘোষনা।
## শেরে বাংলা পুনরায় মুসলীম লীগে যোগ দেন।
### আওয়ামীলীগের একট গ্রুপ হক সাহেবের সাথে যুক্তফ্রন্ট করতে আগ্রহী হয়। ভাসানী বলেন হক সাহেব যদি আওয়ামীলীগে আসে তো আসতে পারেন। তবে তার সাথে কিছুতেই যুক্তফ্রন্ট করা চলবেনা। কারণ মুসলিম লীগ থেকে বিতাড়িতরাই তার সাথে তখন যোগ দিয়েছিল।
## ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বেশির ভাগ সদস্যই যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে মত দেন। হক সাহেব আওয়ামীলীগে যোগ দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার সংগীরা তাকে ভুল বোঝায়।
##ময়মনসিংহে আওয়মীলীগের ওয়ার্কিঙ কমিটির সভা হয়। শেখ মুজিব সহ বেশির ভাগ সদস্যই যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। শেখ মুজিব বলেন দেশে আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কোন দল নেই। যুক্তফ্রন্ট করা মানে কিছু মরা লোককে বাচিয়ে রাখা। শহীদ সাহেব ও ভাসানী সাহেব ও যুক্তফ্রন্টের ঘোর বিরোধী ছিলেন। যুক্ত ফ্রন্ট হবেনা এ সিদ্ধান্তের পর শহীদ সাহেব পাকিস্তান গেলেন । শেখ মুজিব জেলায় জেলায় সভা করে বেড়াচ্ছেন। আর এদিকে ঢাকায় বসে মাওলানা ভাসানী শেরেবাংলার সাথে যুক্তফ্রন্ট সই করে ফেললেন। (যেখানে আওয়ামীলীগ একক ভাবে জিততে পারত সেখানে নেজামে ইসলাম পাির্ট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, গনতান্ত্রিক দল সহ বিভিন্ন নামের সংগঠন যুক্তফ্রন্টের নামে নমিনেশন দাবীকরতে লাগল। যারা দিনরাত খেটেছে আওয়ামীলীগের জন্য এমন লোক নমিনেশন পেলনা, মাত্র তিন চার মাস আগেও মুসলীম লীগে ছিল এরকম লোক নমিনেশন পেয়ে গেল।) সব মিলিয়ে ভজগট লেগে গেল।
### নিবার্চনে গোপালগঞ্জ থেকে শেখ মুজিব নির্বাচিত হন। তিনশ আসনের মধ্যে নয়টি পায় মুসলিম লীগ।
## আওয়ামীলীগের নেতা হিসেবে শহীদ সাহেব নির্বাচন পরিচালনা করলেও নির্বাচনের পর পার্লামেন্টারী বোর্ডের নেতা হন শেরে বাংলা। এর পর মন্ত্রী সভা গঠন নিয়ে আলোচনা চলল। হক সাহেব কয়েকজন নিয়ে প্রাথমিক মন্ত্রী সভা গড়তে চাইলেন। কিন্তু পুরো মন্ত্রীসভা গঠন না হলে আওয়ামীলীগের কেউ মন্ত্রীসভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। হক সাহেব বঙ্গবন্ধুকে মন্ত্রীসভায় নিতে অস্বীকৃতি জানান। মন্ত্রীসভা নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চলল। পরে শেখ মুজিব সহ বার জনকে নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। পরে রাতারাতি আরও কয়েকজন বেড়ে যায়।
### সরকার গঠনের পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। আদমজী জুট মিলে দাংগা সৃষিট করা হয় সরকারের বদনামের জন্য। যুক্তফ্রন্ট সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন ও অক্ষম প্রমাণের জন্য।পশ্চিম পাকিস্থানে এ নিয়ে প্রপাগান্ডা চালানো হল। আর এর পরিণতি হিসেবে মন্ত্রীসভা ভেংগে দেয়া হয়। শেখ মুজিব করাচি যান অসুস্থা শহীদ সাহেবকে দেখতে সেখান থেকে দেশে ফিরে দাংগা সৃষ্টির অভিযোগে গ্রেফতার হন। মাওলানা ভাসানী এসময় বিলাত যান। ১২ জন মন্ত্রীর মধ্যে একমাত্র শেখ মুজিবই গ্রেফতার হন। দশমাস জেলে থাকতে হয় আবারও।
#### এদিকে ৫৩ সালে মুসলীম লীগ বিতাড়িত কেউ কেউ মন্ত্রীত্ব ফিরে পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মোহাম্মদ আলী ঢাকায় এসে হক সাহেবের দলের সাথে গোপন সমঝোতা করলেন আওয়ামীলীগকে না নিলে তার দল পূর্ব বাংলায় সরকার গঠন করতে পারবে এবং শহীদ সাহেব যুক্তফ্রন্টের কেউ নয় একথা ঘোষনা দিতে হবে। শহীদ সাহেব রোগমুক্তির পর কারও সাথে পরামর্শ না করে দেশের অবস্থা না বুঝে আইনমন্ত্রীর পথ গ্রহন করলেন।
## ১৯৫৫ ৫ জুন গনপরিষদের সদস্য হন। ১৭ জুন আওয়ামীলীগের পক্ষে পূর্ব পাকিস্থানের স্বায়ত্বশাসন দাবী করে ২১ দফা ঘোষনা দেন। ২১ অক্টোবর কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রী হন।
১৯৫৭ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান সামরিক শাসন জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন। ১১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। ১৪ মাস জেল খাটার পর তাকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেলগেটে গ্রেফতার করা হয়।
১৯৬০ সালের ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করে তিনি মুক্তিলাভ করেন। আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন করার জন্য তিনি গোপন রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালান। এ সময়ই স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্য স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে গোপন সংগঠন গড়ে তোলেন।
১৯৬২ সালের ৬ ফ্রেব্রুয়ারী জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। ১৮ জুন মুক্তিলাভ করেন। (২জুন সামরিক শাষনের অবসান ঘটে)। ২৪ সেপ্টেম্বর লাহোর যান এবং সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলেন।
১৯৬৩ সালে অসুস্থ সোহরাওয়াদীর্র সাথে পরামশের জন্য লন্ডন যান শেখ মুজিব। ৫ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী ইন্তেকাল করেন।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামীলীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়।
১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ও সাম্প্রদায়িক দাংগা প্রতিরোধে দাংগা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়।
রাস্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪ দিন পূর্বে আবার গ্রেফতার।
১৯৬৫ সালে মুক্তিলাভ।
১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারী ৬ দফা পেশ। ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক সফর শুরু করেন । তাকে বারবার গ্রেফতার করা হয়। ৮ মে পুনরায় গ্রেফতার হন।
১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারী রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের। ১৭ জানুয়ারী মুিক্ত দিয়ে জেল গেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার।
১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী জনগণের চাপের মুখে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি। ২৩ ফেব্রুয়ারী রেসকোর্ষ ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা। আনুষ্টানিক ভাবে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান।
১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারী পুনরায় আওয়ামীলীগের সভাপতি নির্বাচিত। ১ এপ্রিল কার্যকরী পরিষদের সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত। ৭ জুন রেসকোর্স ময়দানের সভায় ছয়দফার প্রশ্নে আওয়ামীলীগকে নির্বাচিত করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান। ১৭ অক্টোবর দলের প্রতিক নৌকা নির্বাচন। ২৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশ্য বেতার টিভিতে ভাষন। ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নিরংকুশ বিজয় লাভ। জাতীয় পরিষদের ১৬৯ টি আসনের মধ্য ১৬৭ টি প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসন লাভ।
১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারী নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ। ৫ জানুয়ারী পাকিস্তানের সর্বাধিক আসন লাভকারী ভুট্টো কেন্দ্রে আওয়ামীলীগের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠনে সম্মতি। জাতীয় পরিষদের সদস্যদের সভায় শেখ মুজিব পার্লামেন্টারী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২৮ জানুয়ারী ভুট্টো ঢাকায় আসেন। তিনদিন বৈঠকের পর আলোচনা ভেংগে যায়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় জাতীয় পরিষদের সভা আহ্বান করেন। ১৫ ফেব্রূয়ারী ভুট্টো দুই প্রদেশে দুই দলের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবী জানান।
১৬ ফেব্রুয়ারীী বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে এ দাবীর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন ক্ষমতা আওয়ামীলীগের কাছেই হস্তান্তর করতে হবে।
১ মার্চ জাতীয় পরিষদের সভা অনিদির্ষ্ট কালের জন্য বনধ ঘোষনা। ৩ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল আহ্বান। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক।
৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ স্বাধীন দেশ হিসেবেই বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। বাইরের কারো হুকুম এদেশে চলেনি। সবাই বঙ্গবন্ধুর নিদের্শ মেনে নিয়েছে। ১৬ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তর আলোচনা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু আর ইয়াহিয়ার মাঝে। ভুট্টৌ এসে আলোচনায় যোগ দেন। ২৪ মার্চ পর্যন্ত আলোচনা হয়।২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হলে ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগ। রাতে নিরীহ জনগণের উপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নৃশংষ হত্যাযজ্ঞ। ২৫ রাত ‌১২টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষনা দেন। এই ঘোষনা সর্বত্র টেলিফোন, টেলিগ্রাম ওয়ারল্যাসে পাঠানো হয়। রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া এক ভাষনে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেন।
২৬ মার্চ চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা পত্র পাঠ করেন।
১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করে। তার আগে ৭ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে ঢাকার উদ্দেশ্য প্রথমে লন্ডন পাঠানো হয় সেখানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ। লন্ডন থেকে ঢাকায় আসার পথে ভারতে যাত্রা বিরতি সেখানে ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ। ১০ জানুয়ারী ঢাকায় পৌছার পর অবিস্মরনীয় সম্বর্ধনা জ্ঞাপন। ১২ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৪৯ সালে দেয়া বাহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। ৬ ফেব্রুয়ারী ভারত সফর। ২৮ ফেব্রুয়ারী সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর। ১২ মার্চ মিত্রবাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ। ১০ অক্টোবর জুলিও কুরী পুরস্কার লাভ।১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব প্রদানের ঘোষনা। ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাক্ষর। ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর।
১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের প্রথম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ টি আসন লাভ। ৩ সেপ্টেম্বর ঐক্যফ্রন্ট গঠন। ৬ সেপ্টেম্বর আলজিরিয়া, ১৭ অক্টোবর জাপান সফর।
১৯৭৪ সালে ১৭সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষন প্রদান।
১৯৭৫ সালে ২৫ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন।২৪ ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় দল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ গঠন। জাতীয় দলে যোগদানের জন্য সকল রাজনৈতিক দল ও নেতার প্রতি আহ্বান।
১৫ আগষ্ট কুচক্রী সেনাসদস্যদের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শহীদ হন। সামরিক শাষন জারি। জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেয়ার জন্য ২৬ সেপ্টেম্বর কুখ্যাত কালো আইন ইনডেমনিটি (সামরিক অধ্যাদেশ) জারী। জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাষনের মাধ্যমে অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল। খুনিদের বিদেশের বিভিন্ন দুতাবাসে চাকরী প্রদান।
Image may contain: 1 person, text
LikeShow more reactions
Comment