Sajeeb Wajed Ahmed Joy and Bangabandhu

Sajeeb Wajed Ahmed Joy:

Sajeeb Ahmed Wazed (Bangla: সজীব ওয়াজেদ) (born July 27, 1971), also known as Sajeeb Wazed Joy, is an IT professional who was selected by World Economic Forum as one of the 250 Young Global Leaders of the World. He is the son of Sheikh Hasina Wazed, the current Prime Minister of Bangladesh and the grandson of Sheikh Mujibur Rahman, the first President of Bangladesh

Early life and education

Sajeeb Wazed was born in 1971 during the Bangladesh Liberation War to the eminent Bengali nuclear scientist Dr. M. A. Wazed Miah and Sheikh Hasina Wazed. His birth during the war and subsequent victory of the Bengalis earned him the nickname given by his maternal grandfather, Sheikh Mujibur Rahman, “Joy” which in Bengali means victory.

Wazed was schooled in India. His early days were spent at boarding in St. Joseph’s College Nainital, and later at Kodaikanal International School in Palani Hills, Tamil Nadu. He pursued a Bachelor of Science degree in computer science, physics and mathematics from Bangalore University. Wazed then pursued another bachelor of science degree in computer engineering at the University of Texas, Arlington in the United States. Subsequently, Wazed attended the Kennedy School of Government in Harvard University, where he completed a Masters in Public Administration.

Politics

In 2004, Sajeeb Wazed visited Bangladesh amid speculations that he would be taking up the Sheikh family’s political mantle. He and his wife received a rousing reception as they landed in Shahjalal International Airport. Thousands of people lined Dhaka’s roads to have glimpse of Joy and his wife. During the visit he rejected a letter sent by Tarique Rahman, son of the then Prime Minister and his mother’s arch rival, Khaleda Zia. The letter congratulated Sajeeb’s possible entry into politics.

In 2007, Wazed was selected by the World Economic Forum in Davos as one of the “250 Young Global Leaders of the World”. The forum cited his role as Advisor to the President of the Bangladesh Awami League.

During the 2006–2008 Bangladeshi political crisis and Minus Two controversy, both Sheikh Hasina and Khaleda Zia were arrested by the military backed interim government on charges of corruption and “anti-state” activities. Hasina maintained that the charges were baseless and her detention was part of efforts by the military to keep her out of the political arena in order to pave the way for another period of quasi-military rule in Bangladesh. Sajeeb Wazed began campaigning in the United States and Europe for the release of his mother and other detained high-profile politicians. Hasina was eventually released in June 2008. She subsequently traveled to the United States for medical treatment.

In December 2008, Bangladesh held national elections that saw Sheikh Hasina’s Awami League and its coalition partners secure the biggest parliamentary majority since 1973, capturing 262 seats in the 300 seat parliament, 230 of which went to the Awami League. Sheikh Hasina was sworn in as the 14th Prime Minister of Bangladesh on 6 January 2009. Prior to the elections, Wazed wrote an article in the Harvard International Review in which he outlined a “secular plan” to stem the rise of Islamic extremism in Bangladesh.

Wazed gave an interview to the BBC in February, 2009 in the aftermath of the violent Bangladesh Rifles mutiny. Asked about security threats faced by his mother from tension provoked in the military by the mutiny and whether certain quarters were trying to stage a scenario similar to that of his grandfather’s assassination in 1975 during a coup by junior army officers, Wazed commented that there was a “distinct possibility” of such a situation being intended. He also stressed that security was beefed up at the Prime Minister’s residence and went on to praise his mother’s handling of the mutiny. “This is probably the biggest incident Bangladesh has had since 1975 and our government and the prime minister has handled this compassionately, pragmatically but decisively to bring the situation under control” he said.

Primary membership

On 25 February 2009, Wazed officially joined the Awami League as a primary member of the Rangpur district unit of the party. Awami League Joint General Secretary Mahbubul Alam Hanif handed over Wazed’s membership form to district party leaders. Rangpur is the ancestral home district of his father Wazed Miah.

The move by Wazed to formally join the Awami League was welcomed by many political leaders and commentators, including the Bangladesh Nationalist Party. Senior BNP leader Nazrul Islam Khan gave his party’s official reaction, stating “we see the matter positively”.

Digital Bangladesh

Within days of joining the Awami League as a primary member, Wazed, in his capacity as an IT policy analyst, unveiled the concept paper and action plan for the government’s ambitious “Digital Bangladesh” scheme; to develop a strong ICT industry in Bangladesh and initiate e-governance and IT education on a mass scale. Wazed emphasized the use of information technology to achieve Bangladesh’s development goals. He also noted that the Digital Bangladesh “scheme” would contribute to a more transparent system of government through e-governance, as it would greatly reduce massive bureaucratic corruption in Bangladesh. He also spoke of Bangladesh’s potential to become an IT outsourcing hub in the next few years given its various advantages in a growing young educated population with a “neutral” English accent. Wazed stated that by the 2021, the IT industry can overtake textiles and readymade garments as the principal foreign exchange earner for Bangladesh.

Wednesday 10 October 2012

রক্তাক্ত '৭৫ : একটা দিনের হেরফের যেভাবে বদলে দিলো বাঙালীর ইতিহাস:


রক্তাক্ত '৭৫ : একটা দিনের হেরফের যেভাবে বদলে দিলো বাঙালীর ইতিহাস
 
১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডেই শেষ হয়ে যায়নি সব। যার মুক্তির ডাকে সাড়া দিয়ে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলো বাঙালী, তাদের সবার কণ্ঠ তখনও রোধ করা যায়নি। তবে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চলছিলো। খুনীরা মুক্তিযোদ্ধা এবং নিহত মুজিব স্বৈরাচার। অস্থির সে সময়টায় ষড়যন্ত্রের একটা জাল বোনা হচ্ছিলো আসলে। সব মাথাগুলোকে সে জালে আটকে একসঙ্গে নিকেশ করার ষড়যন্ত্র। দক্ষ গ্র্যান্ডমাস্টারের মতো দেওয়া সে চালে খন্দকার মোশতাক আহমদ কিংবা স্বঘোষিত খুনীরা সাময়িক রাজত্ব ও রাজ্যশাসনে মশগুল। জালটা গুটিয়ে আনা হলো নভেম্বরে।
২ নভেম্বর সেনানিবাসে আবারও বিপ্লব। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ অভ্যুথান ঘটালেন। তারপর আমাদের গেলানো ইতিহাস বলে খালেদ একজন ক্ষমতালোভী ছিলেন মাত্র। আমাদের জানানো হয় ৩ নভেম্বর সকালে জেলখানায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে। সেই চার নেতা যারা বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের খুনীরা দেশ ছাড়ে সেদিনই, খালেদ তাদের আপোষে যেতে দেন। জিয়াকে গৃহবন্দী করে খালেদ সেনাপ্রধান হয়েই খুশী। মোশতাক রাষ্ট্রপতি থেকে যান, দুদিন পর তাকে সরিয়ে বিচারপতি সায়েমকে আনা হয়। 

৭ তারিখ আবারও অভ্যুথান। এবার সিপাহী-জনতা সম্মিলিতভাবে বিপ্লব ঘটিয়ে খালেদকে উৎখাত করে জিয়াকে উদ্ধার করলো। দেশও উদ্ধার পেলো। যদিও বিপ্লবীদের নেতা কর্ণেল তাহেরকে বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হতে হলো। নির্মূল হয়ে যেতে হলো জাসদকেও। যারা টিকে গেলেন, তাদের মুখে আমরা শুনে গেলাম নানা বিপ্লবী কীর্তি এবং বিপ্লবের গল্প। সেসব গল্পে অসঙ্গতি থাকলেও এবং পরস্পর পরষ্পরের প্রতিপক্ষ হলেও কমন ভিলেন খালেদ মোশাররফ। তিনি একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবেই রয়ে যান। 

সিএমএইচের সামনে খোলামাঠে পড়ে থাকে তার লাশ, সেখানে থুতু দিয়ে যায় বিপ্লবীরা। সেই থুতুতে এখনও ভেজা ইতিহাসের বই। কিন্তু ইতিহাসকে রাবার দিয়ে ঘষে ফেলা যায় না, ইতিহাসকে নিজের মতো করে লেখা যায় না। ইতিহাস ক্লু রেখে যায় কোথাও না কোথাও। দুঁদে গোয়েন্দার মতোই কোনো নাছোড়বান্দা গবেষক ছেড়া টুকরোগুলো জোড়া দিয়ে আবিষ্কার করে বসেন ব্যাপক গড়মিল। তারপর? তারপর পাল্টে যায় ইতিহাস 

কে জানে খালেদের উদ্দেশ্য? কে বলবে তার কথা?
নভেম্বরের ঘটনাবলী নিয়ে আশ্চর্য্য নিশ্চুপ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি। জেলহত্যায় বিমূঢ় এবং এর বিচার নিয়েই যত উদ্বেগ ও হতাশা। খালেদের অভ্যুথানের এন্ড প্রোডাক্ট ৭ নভেম্বরের তথাকথিত সিপাহী-জনতা বিপ্লব। আর এর কৃতিত্ব নিয়ে খেউয়াখেউয়ি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ (সাবেক মুসলিম বাংলা আন্দোলন) এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ)। একদিকে জিয়াউর রহমান অন্যদিকে কর্ণেল আবু তাহের। স্বাধীন বাংলাদেশের যাবতীয় ক্ষমতা যেন ক্যান্টনমেন্টেই, তারাই নির্ধারণ করে দেবে জনগনের নিয়ন্তা হবে কারা।

স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানে যে চর্চাটা ছিলো, যাতে অভ্যস্ত এদেশবাসী। উর্দির বিরুদ্ধে লড়ে গণতন্ত্র ছিনিয়ে আনা লোকটা আর নেই, তাই প্রতিবাদও নেই। খালেদ নিয়ে কেউ বলেন না তা সত্যি নয়। বলেন, তার সহযোদ্ধাদের মধ্যে আশ্চর্য্যজনকভাবে বেঁচে যাওয়া শাফায়েত জামিল এখনও লিখে চলেছেন সেরাতের কল্পকাহিনী। 

ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান বেঁচে নেই। খালেদের পক্ষের কেউ বেঁচে নেই। শুধু শাফায়েত জামিলের মুখে শুনে আমরা বুঝে যাই কিরকম ভিতু ছিলেন আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম বীরযোদ্ধা এস ফোর্স অধিনায়ক শফিউল্লাহ এবং কিরকম কেয়ারলেস ছিলেন নিজের বুঝটা বুঝতে উন্মাদ হয়ে ওঠা কে ফোর্স অধিনায়ক খালেদ। এবং কতটা মহান ছিলেন জেড ফোর্স অধিনায়ক জিয়াউর রহমান। খালেদের অনুসারী সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করলেও তাকে তিনি ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তার মুখে শুনেই কেউ কেউ হয়তো আফসোস করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীরের করুণ মৃত্যুগাথা শুনে। তারপর ঝাপিয়ে পড়ে জিয়া-তাহের বিতর্কে। সে প্রসঙ্গে আমরা না হয় পরেই আসছি। 

১৫ আগস্ট পরবর্তী ঢাকা সেনানিবাস, কিছু খন্ডচিত্র
১৯৭৫ সালে ঢাকা সেনানিবাসে যা কিছু ঘটছিলো তার অন্যতম স্বাক্ষী লে.কর্ণেল (অবঃ)এ.কে.হামিদ। বাংলার দাবা সম্রাজ্ঞী রাণী হামিদের স্বামী কিংবা ফুটবলার কায়সার হামিদের পিতা ছাড়াও তার আরেকটি পরিচয় আছে। কোর্সমেট হিসেবে তিনি জিয়াউর রহমানের বন্ধু এবং আগস্ট-নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহ তিনি মলাটবন্দী করেছেন তিনটি সেনা অভ্যুথান ও কিছু না বলা কথানামের এক স্মৃতিগ্রন্থে। ঘটনা বর্ণনায় তারও পক্ষপাত আছে, তারপরও অনেক অজানা প্রেক্ষাপট তিনি উন্মোচন করেছেন একদমই আঁধারে থাকা পাঠকের সামনে। তার বর্ণনায় কিছু সূত্র মিলে আমাদের, যেগুলো মিলিয়ে নেওয়া যায় ভিন্নসূত্রে পাওয়া কিছু কর্মকান্ডের সঙ্গে। আমরা মোটামুটি একটা ছবি পাই সে সময়কার বিভিন্ন ভূমিকায় বিভিন্ন চরিত্রের রূপায়নের। একইসময় অত্যন্ত সক্রিয় ছিলো মার্কিন দূতাবাস। তাদের কিছু তারবার্তা আমাদের অনেক ঘটনার নতুন অর্থ যোগান দেয়। এই ঘটনাগুলো অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক কারণ ১৫ আগস্টের সঙ্গে নভেম্বরের ঘটনাবলী আসলে একই সুতোয় গাথা। 

তার আগে আমরা সে সময়কার সেনাপ্রধান শফিউল্লাহর ভাষ্য শুনি। আত্মপক্ষ সমর্থনে অনেক কথাই তিনি বলেছেন। কিন্তু সেখান থেকে আমরা গুটিকতক তথ্যকে ছেকে আলাদা করে ফেলছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হচ্ছে : একজন সেনাপ্রধান সেনাবাহিনীর সার্বিক দায়িত্বে থাকলেও সেনাসদস্যদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তার হাতে না, সেটা ব্রিগেড কমান্ডারদের হাতে (In the army, the chief of staff commands the army but not the troops. The brigade commanders command the troops)তারাই নির্দেশ দিয়ে পরিচালনা করতে পারেন তাদের অধীনস্থ সেনাদের। এই আইনটি ভবিষ্যতে আমাদের অনেক ঘটনায় সিদ্ধান্তে আসতে সাহায্য করবে। ১৫ আগস্ট ঢাকা ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন কর্নেল শাফায়াত জামিল। তাই ১৫ আগস্ট ভোরে মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক কর্নেল সালাহউদ্দিন যখন শফিউল্লাহকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে জানালেন রেডিও স্টেশন, গণভবন এবং বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে আর্মার্ড এবং আর্টিলারি ডিভিশনের সন্দেহজনক অভিযাত্রার কথা, তিনি শাফায়াতকে ১, ২ ও ৪ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্ট দিয়ে তা প্রতিরোধের নির্দেশ দিলেন। নির্দেশনাটা সরাসরি নয় অবশ্য। কর্নেল সালাহউদ্দিনকে দিয়ে, কারণ শাফায়েতের ফোন এনগেজড পাচ্ছিলেন তিনি। 

এরপর শফিউল্লাহ ফোন করেন বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা গার্ড রেজিমেন্টের প্রধান কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমেদকে। জামিল জানান তিনি বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়েছেন যে কিছু লোক তার বাড়ির সামনে হল্লা করছে। শফিউল্লাহ জামিলকে বলেন যেভাবেই হোক বঙ্গবন্ধুকে অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে। কর্নেল জামিল সফল হননি। সোবহানবাগ মসজিদের কাছেই তাকে হত্যা করা হয় বজলুল হুদার নির্দেশে (হামিদ সম্ভাব্য খুনী হিসেবে বলেছেন মেজর নুরের কথা)। খুনীদের কাছ থেকে বাদানুবাদের মাধ্যমে লাশটি উদ্ধার করেন খালেদ মোশাররফ। খুনীদের শর্ত ছিলো জামিলের স্বজনরা এক ফোটা চোখের জলও ফেলতে পারবে না। খালেদ লাশ এনে তার গ্যারেজে রাখেন, সেখানেই জানাজা পড়া হয়।এবং পরে দাফন করা হয়। দারুণ ঝুঁকি নিয়েই কাজটি সারেন খালেদ। তিনি তখন চীফ অব জেনারেল স্টাফ। সেনাসদস্যদের বেতন-বদলি-ছুটি ইত্যাদির বাইরে কোনো এখতিয়ার নেই।

শফিউল্লাহ শাফায়েত জামিলকে ফোনে পেয়েছিলেন সকাল সাড়ে পাঁচটায়, তাকে নির্দেশনাটি দেন। ২০-২৫ মিনিট পর বঙ্গবন্ধূর সঙ্গে কথা হয় তার, এরপর লাইন ডেড। (শাফায়াত এ প্রসঙ্গে বলেছেন শফিউল্লাহ তাকে ঘটনা জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো অর্ডার দেননি, তিনি নাকি বিড়বিড় করছিলেন! তাকে উদভ্রান্ত দেখাচ্ছিল) এরপরের ঘটনাপ্রবাহে জানা যায় শফিউল্লাহ খালেদকে নির্দেশ দেন ৪৬তম ব্রিগেডের দায়িত্ব নিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু খালেদ জানান তার অফিসের সামনে একটি ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে। খুনীদের একজন মেজর ডালিম শফিউল্লাহকে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যায়, সেখানে শফিউল্লাহ আনুগত্যের শপথ পড়েন। ১৮ তারিখ পর্যন্ত শফিউল্লাহ বঙ্গভবনে থাকেন মোশতাক এবং খুনীদের সঙ্গে। সেনানিবাসে ফিরে তিনি উদ্যোগি হন সেনাবাহিনীতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার, বঙ্গভবনে এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পজিশন নিয়ে থাকা সেনা ইউনিট এবং এদের কমান্ডারদের ক্যান্টনমেন্টে ফেরাতে এক সেনাবৈঠক ডাকেন তিনি। এসময় উপ-সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তার সিদ্ধান্তে দ্বিমত জানান। বলেন, ভারত বাংলাদেশ আক্রমণ করতে পারে, তাই সেনাবাহিনীকে সেনানিবাসে না ফিরিয়ে বরং সীমান্তে সন্নিবেশ করানো উচিত হবে। ১৯ আগস্টের সে কনফারেন্সে উপস্থিত ছিল কর্নেল ফারুক-রশীদও। সেখানে হঠাৎ শাফায়েত জামিল উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠেন- সব কিছুর জন্য এই লোকগুলো দায়ী, এদের কোর্টমার্শালে বিচার করতে হবে। বৈঠক ভেস্তে যায়, ফারুক-রশীদ ফিরে যায় বঙ্গভবন। ২২ আগস্ট মোশতাককে শফিউল্লাহ অনুরোধ জানান এদের ফিরিয়ে দিতে, কিন্তু মোশতাক জানান অফিসাররা ভয় পাচ্ছে, তারা কিছুদিন সময় চাচ্ছে। ২৪ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীকে সামরিক উপদেষ্টা নিয়োগ দেন মোশতাক। একইদিন শফিউল্লাহর বদলে জিয়া সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। সেদিন বঙ্গভবনে ডেকে তাকে বিদেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দেওয়া হলেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন শফিউল্লাহ। তিনি মত পাল্টান ৩ নভেম্বর। জেলহত্যার পর মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নিয়ে দেশ ছাড়েন। 

শফিউল্লাহর বক্তব্যকে এত গুরুত্ব দিয়ে বর্ণনার অন্যতম কারণ হচ্ছে লে.কর্ণেল হামিদও বইয়ে তার ভাষ্যকেই ব্যবহার করেছেন চমকপ্রদ সংযুক্তি হচ্ছে স্টেনের মুখে শফিউল্লাহকে ডালিম যখন রেডিওতে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন জিয়া তার অনুগামী হন। নিজের গাড়ীতে ডালিমকে বসতে অনুরোধ জানালে ডালিম সেটা প্রত্যাখান করে বলেন- নো স্যার, আই ডোন্ট গো ইন জেনারেলস কার১৫ আগস্টের সকালের একটি বর্ণনা উঠে এসেছে হামিদের জবানীতে। ৪৬ বিগ্রেডের সদরে উল্লসিত অবস্থায় তিনি শাফায়েত এবং খালেদকে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। শাফায়েত তাকে বলছেন, দেখলেন স্যার, ফ্রিডম ফাইটার্স হ্যাভ ডান ইট বিফোর অ্যান্ড দে হ্যাভ ডান ইট এগেইনখালেদকে তিনি দেখলেন সাভারের রক্ষীবাহিনী সদরকে ফোন করে আত্মসমর্পন করতে নির্দেশ দিচ্ছেন একইসঙ্গে দুটো ফাইটার প্লেন পাঠিয়ে তাদের ভয় দেখাতে বলছেন বিমান বাহিনীকে। এই পর্যায়ে এসে আর্মির চেইন অব কমান্ড নিয়ে আসলেই বিভ্রান্তি বেড়ে যায় আমাদের। চীফ অব জেনারেল স্টাফ বিমান বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা আদৌ রাখেন কিনা এ নিয়ে ধন্দে পড়ে যাই। কারণ শফিউল্লাহর ভাষ্যমতে তাকে ৪৬ বিগ্রেডের দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সেখানে পাঠানোর একটু পরই ফিরে এসেছেন খালেদ, বলেছেন ট্যাঙ্কের কথা। উত্তরটা থাকতে পারে শফিউল্লাহর বলা সেই সামরিক আইনটিতেই: যদি চীফ অব আর্মি স্টাফ ট্রুপসদের কমান্ড করার ক্ষমতা না রাখেন, তাহলে সে ক্ষমতা চীফ অব জেনারেল স্টাফের কস্মিনকালেও হবে না। আবার বঙ্গভবনে শফিউল্লাহকে কৌশলে এক কাপড়ে ১৭ তারিখ পর্যন্ত ব্যস্ত (কিংবা আটকে) রাখার উল্লেখ করেছেন হামিদ, সেখানে তাকে ছায়ার মতো নাকি অনুসরণ করেছেন জিয়া। ১৯ আগস্টের সেই মিটিং এবং সেখানে শাফায়েতের উত্তেজিত কথাবার্তা আছে হামিদের বইয়েও। বাড়তি যোগ হয়েছে মিটিংয়ের আগে শফিউল্লাহকে বলা তার উক্তি: স্যার আপনি জেনে রাখুন, এগুলো সমস্ত গন্ডগোলের পেছনে রয়েছে জেনারেল জিয়ার হাতশফিউল্লাহর উত্তর, শাফায়াত, এ কথাটা বুঝতে তোমার এত সময় লাগলো! হামিদের ব্যাখ্যা অভ্যুথানে সব ক্ষমতা মেজরদের হাতে চলে যাওয়ায় এবং তার ব্যক্তিগত কোনো লাভ না হওয়াতেই নাকি খেপে উঠেছিলেন শাফায়েত। ঘটনার পরবর্তী পাঠে তার এই মূল্যায়ন আমাদের ভুল মনে হয়েছে। বরং শাফায়াত তখন আসলে বিভীষণের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।

সরিয়ে দেওয়ার আগে শফিউল্লাহ যে মুজিবের খুনীদের সেনানিবাসে ফিরিয়ে বিচারের তোড়জোর করছিলেন তার একটা প্রমাণ আমরা মার্কিন তারবার্তায় পাই ( আগেই একটা পোস্টে উল্লিখিত ) ২০ আগস্ট ২ ফিল্ড আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিন স্বস্ত্রীক আশ্রয় নেন মার্কিন দূতাবাসে। আশ্রয় চাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে বলেন তার এবং অভ্যুথানকারীদের প্রাণ সংশয়ের কথা। ২৪ তারিখ মহিউদ্দিন ফেরত যান সেনানিবাসে, কারণ ঝামেলা মিটে গেছে। শফিউল্লাহকে হটিয়ে জিয়া হয়েছেন সেনাপ্রধান। নভেম্বরেও মহিউদ্দিন এবং ২ ফিল্ড আর্টিলারির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। ৩ নভেম্বর প্লেনে চড়ে বঙ্গবন্ধুর সকল খুনী যখন ব্যাঙ্ককের পথে, তখন সবার চোখ ফাকি দিয়ে মহিউদ্দিন ঢাকাতেই। ৭ নভেম্বর গৃহবন্দীত্ব থেকে উদ্ধার পেয়ে জিয়া তার অপারেশনাল হেডকোয়ার্টার হিসেবে বেছে নেন টু ফিল্ড আর্টিলারিকেই। মহিউদ্দিন তখন তার সার্বক্ষণিক সঙ্গীদের একজন। হামিদ লিখেছেন শফিউল্লাহ নাকি জানতেন না তাকে সরানো হয়েছে, জিয়া নতুন পদের চিঠি হাতে পেয়েই কমান্ড নিয়ে নেন। এবং এই ঘটনাই নাকি হিংসায় পুড়ে ছারখার খালেদকে শাফায়াতের সঙ্গে মিলে ৩ নভেম্বরের অভ্যুথানের জন্য উদ্যোগী করে। 

দূর্নীতির দায়ে চার জাতীয় নেতা গ্রেফতার! 

জিয়াকে সেনাপ্রধান বানিয়ে সামরিক সুরক্ষার আগে রাজনৈতিক সুরক্ষাটুকুও সেরে নিয়েছেন মোশতাক ও খুনীর দল। ২৩ আগস্ট অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মু্ক্তিযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, দুই মন্ত্রী মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ২৪ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকে শিরোনাম হয়, “দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ ২৬জন গ্রেফতার। ভেতরে লেখা হয়:
দূর্নীতি, সমাজবিরোধী তৎপরতা, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ ও সম্পত্তি হস্তগত করার অভিযোগে সামরিক আইনের বিধিমালার আওতায় সাবেক সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী, সাবেক উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ, জনাব কোরবান আলী, আবদুস সামাদ আজাদ এবং কয়েকজন এমপিসহ মোট ২৬জনকে গতকাল (শনিবার) গ্রেফতার করা হইয়াছে।


এ বিষয়ে বাড়তি তথ্য জানা গেছে মার্কিন তারবার্তায় যেখানে মোশতাক সরকারের সাম্প্রতিক কার্যক্রম বর্ণনায় উল্লিখিত হয়েছে যে তাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে দূর্নীতি মামলাটি দূর্বল এবং একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে রাজস্বাক্ষী বানিয়ে এটাকে আরেকটু ভারি করার চেষ্টা চলছে। আরো জানা গেছে এসব এবং ভবিষ্যত মামলাগুলো পর্যালোচনার জন্য ৫ সদস্যের একটি দূর্নীতি দমন কমিশন গঠনের কথা। এই ৫ সদস্যের একজন নতুন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান।

১৫ তারিখ রাতেই তাজউদ্দিনের বাসভবন ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী। তার বাসভবনের ছাদে এন্টি এয়ারক্রাফট গান বসানো হয়, নীচতলায় কন্ট্রোলরুম। টেলিফোন সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। ক্যাপ্টেন শহীদ নামে একজন অফিসার এসে জানান বাসার কেউ বাইরে যেতে পারবে না, বাইরে থেকেও কেউ আসতে পারবে না। রাতে মেজর ডালিম বাসায় এসে তাজউদ্দিনকে বলেন, ‘আপনার নিরাপত্তার জন্যই এ ব্যবস্থা, সব ঠিকঠাক আছে তো?’ তাজউদ্দিন নাকি ধমক দিয়ে বলেন, ‘তুমি নিজের চোখে দেখতে এসেছ্ আমাকে সত্যি বন্দী করা গেছে কিনা। সত্যি আমি বন্দী হয়েছি কিনা।তার মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি বাবার ভাষ্যে আরো লিখেছেন: আমি আমার এই জীবনে কোনদিন সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করিনি। ১৫ আগস্ট বাসা থেকে বের না হওয়াটাই আমার জীবনের মারাত্মক ভুল ছিলো। অর্থাৎ তাজউদ্দিন সেদিন আত্মগোপন না করার জন্য আফসোস করেছেন। অথচ আত্মগোপন করেও লাভ হয়নি মনসুর আলীর। ওবায়দুর রহমান ও শাহ মোয়াজ্জেমের আশ্বাসে তার ছেলেরা বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে।তাকে নতুন সরকারে প্রধানমন্ত্রীর পদ নিতে অনুরোধ করা হয়, কিন্তু মনসুর আলী তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলাফল তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এম আর আখতার মুকুলের লেখা আমি খালেদ বলছি বইয়েরএই অংশটুকু ইত্তেফাকের রিপোর্ট এবং রিমির স্মৃতিকথার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মুকুল লিখেছেন তাজউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ২২ আগস্ট, মনসুর আলীকে ১৭ আগস্ট। বাকিদের আটক করে জেলে পাঠানো হয় ২৩ আগস্ট। 

তাজউদ্দিনের ডায়েরির শেষ পাতা 

গ্রেফতার হওয়ার পর মাত্র দুবার তাজউদ্দিনের দেখা পান তার পরিবার। ১৫ অক্টোবর কয়েকজন কারাকর্মকর্তা, গোয়েন্দা অফিসার এবং সামরিক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আধ ঘন্টার জন্য বেগম জোহরা তাজউদ্দিন স্বামীর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান। দ্বিতীয় এবং শেষ সাক্ষাতটি ১ নভেম্বর। এদিন তিনি কিছু তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেন যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,‘আমাদের আর বাঁচিয়ে রাখা হবে না।আজ রাতে ডায়েরির শেষ পাতা লেখা হবে, সেই সাথে শেষ হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা।তার মানে বাতাসে গুঞ্জন ছিলো ঘাতকদের প্রস্তুতি নিয়ে, আর তার আঁচ পাচ্ছিলেন তাজউদ্দিনসহ অন্যরা। ৫৬০তম পাতা সেই ডায়েরির শেষ পাতা। রিমি তার স্মৃতিকথায় (আমার ছোটবেলা ১৯৭১ এবং বাবা তাজউদ্দিন আহমদ) লিখেছেন: সন্ধ্যায় আম্মা বাসায় ফিরলেন। আম্মার মুখ তখন অস্বাভাবিক করুণ। আম্মা বারবার বলছিলেন, কিছু ভালো লাগছে না। বাসায় ফেরার আগে উদভ্রান্তের মতো আম্মা ঢাকা-টঙ্গী রাস্তায় ঘুরেছেন অনেকক্ষণ। আমাকে বললেন: তোমাদের আব্বুকে আজ অন্যরকম লাগছিলো।বারবার সে কালো বর্ডার দেওয়া লাল ডায়েরির কথা বলছিল। বলছিল আজ রাতে ডায়েরির শেষ পাতা লেখা হবে, সেই সাথে শেষ হবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা। বলছিল- আর বোধহয় বাঁচব না। আম্মা বললেন- আজ জেল কর্তৃপক্ষ খুব রুক্ষ ব্যবহার করেছে। জেলের মূল গেটের ভেতরে বাইরে মনে হচ্ছিল যেন সাদা পোষাকে বিশেষ কোনো সংস্থার অতিরিক্ত লোকজন। আব্বুর সাথে আম্মাকে কথা বলতে সময় দিয়েছে মাত্র ১৫/২০ মিনিট।

এবং একটি চাঞ্চল্যকর তারবার্তা:

৫ নভেম্বর ইসলামাবাদ থেকে পাকিস্তানের মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাইরোড একটি জরুরী বার্তা পাঠান  ট্রাবল ইন বাংলাদেশ নামে যে সিরিজ বার্তাগুলো চালাচালি হচ্ছিলো তখন তার মধ্যে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর এটি এবং এখন পর্যন্ত কোন সংবাদ মাধ্যমে এটি আমার চোখে পড়েনি। বাইরোডের বার্তাটির ভাবানুবাদ এমন:

১.(পাকিস্তানের)পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের বাংলাদেশ বিষয়ক পরিচালক আজমত হাসান ৫ নভেম্বর দূতাবাস কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন যে আন্তর্জাতিক রেডক্রসের (আইসিআরসি) পাকিস্তান প্রতিনিধি এইমাত্র টেলিফোন করেছিলেন ঢাকা রেডক্রস প্রতিনিধির বার্তা পেয়ে। ঢাকা প্রতিনিধির মতে শেখ মুজিবের চার সঙ্গীকে ১ নভেম্বর রাতে আবারও বলছি ১ নভেম্বর রাতে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিনিধি দাবি করেছেন ২ নভেম্বর তিনি তাজউদ্দিনকে কবর দিতে দেখেছেন। হাসানের মতে ঢাকা রেডক্রস খালেদ মোশাররফের অভ্যুথানকে এই হত্যাকান্ডের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখছে, সম্পূরক তারবার্তার তথ্য মতো নয় যেখানে খালেদের অভ্যুথানের প্রতিক্রিয়ায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

২.হাসানের সঙ্গে দুতাবাস কর্মকর্তার বৈঠকের মাঝপথে সুইস (সুইজারল্যান্ড) দুতাবাস থেকে একটি ফোন আসে পরিচালকের (হাসান) কাছে, তারা তাদের সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় ৫ নভেম্বর সকালে খন্দকার মোশতাক আহমদকে ঢাকা বিমানবন্দরে দেখা গেছে। সুইসরা বলছে মোশতাক ঢাকা ত্যাগের চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সেনাবাহিনী তাকে বাধা দেয়।

৩.সম্পূরক তারবার্তা বি’ (যেখানে মুজিবের খুনীরা সম্ভাব্য আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে পাকিস্তানের নাম নিয়েছিলো) এখনও না পড়লেও দূতাবাস কর্মকর্তা হাসানের কাছে জানতে চায় ব্যাংককে অবস্থানরত মেজররা পাকিস্তানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে পাকিস্তান সরকারের অবস্থান কি হবে। হাসান জানায় তাদের প্রার্থনা সম্ভবত নামঞ্জুর করা হবে কারণ পাকিস্তান সরকার মাত্র ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করেছে এবং সেখানে যেই ক্ষমতায় আসুক এই সম্পর্ক তারা নষ্ট করতে চায় না।

আলোচিত তারবার্তার ২ ও ৩ নং অনুচ্ছেদ নিয়ে আমরা পরের পর্বে দলিলপত্রসহ বিস্তারিত আলোচনায় যাবো। আমাদের আপাতত মনযোগ এর ১নং অনুচ্ছেদে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস (যেখানে বেশীরভাগই বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কাজ করেন কিংবা বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে এদের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ থাকে) এবং মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তার (সন্দেহাতীতভাবে পাকিস্তানের সিআইএ স্টেশনচীফ) তরফে পাওয়া তথ্যকে আমলে নিলে এটি আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্তি। একটা সময় এদেশে ৪ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হতো, সেটি এখন দলিলপত্রের ভিত্তিতে ৩ নভেম্বরে চলে এসেছে। সেই দলিলপত্রও মহল বিশেষের যোগান দেওয়া কিনা এনিয়ে অনুসন্ধানের সময় এসেছে। কারণ সত্যিই যদি ২ নভেম্বর ভোরে জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হয় এবং খালেদ মোশাররফ সেরাতেই অভ্যুথান করেন তাহলে ইতিহাসের চরিত্রগুলোর অবস্থানে একটা বড় ধরণের ওলটপালট হয়ে যায়। রেডক্রসের ওই কর্মকর্তা সত্যি যদি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকেন তার মানে দাড়ায় তাজউদ্দিনসহ চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর কবর দেওয়া হয় এবং খালেদের অভ্যুথানের পর তাদের আবারও সেখান থেকে তুলে নতুন করে সমাধিস্থ করা হয়। 

জাতীয় চারনেতার সুরতহাল রিপোর্ট:

১৯৯৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মতিউর রহমান সম্পাদিত দৈনিক ভোরের কাগজ একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন ছাপে। মাঈনুল আলমের সে প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিলো জেলহত্যার প্রামাণ্য দলিল উদ্ধার। সেখানে৭৫এর ৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র সচিবকে আইজি প্রিজন নুরুজ্জামানের দেওয়া প্রতিবেদন এবং ডিআইজি প্রিজনের প্রতিবেদন (আইজি প্রিজনকে দেওয়া), দুই ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আজমল চৌধুরী ও খন্দকার মিজানুর রহমান চার নেতার মৃতদেহের যে সুরতহাল রিপোর্ট করেছিলেন তা ছাপে। ২৫ নভেম্বর পত্রিকায় প্রকাশিত এই সুরতহাল রিপোর্টে আমরা কিছু অসঙ্গতি পাই। এর একটি ছাপার ভুলও হতে পারে। যেমন মনসুর আলীর সম্ভাব্য মৃত্যু তারিখ ৪ নভেম্বর, বাকিদের ৩ নভেম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টগুলো গৎবাধা, একইভাষায় লেখা দুয়েকটি জায়গা বাদে। তবে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে মৃতদেহের শরীরে পচন ধরেছে (একদিন এবং দুইদিনের মৃতদেহের পার্থক্য রয়েছে) এবং দুই ম্যাজিস্ট্রেটকেই স্বল্পআলোতে দায়িত্ব সারতে হয়েছে। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে প্রতিবেদনের তারিখ ৫ নভেম্বরও মোশতাক সরকার এবং তার ক্যাবিনেট বহাল যাদের এই প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে। ৬ নভেম্বর জেল হত্যা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারক নিয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন বাস্তবে কোনো তদন্তই করতে পারেনি এবং এ বিষয়ে যাবতীয় তারবার্তা মার্কিন আর্কাইভে ডিলিটেড অবস্থায় পাওয়া গেছে। 

নীচে দুজনের সুরতহাল রিপোর্ট তুলে দেওয়া হলো:

সৈয়দ নজরুল ইসলাম: 

আমি খন্দকার মিজানুর রহমান, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা সদর (উঃ) কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি সাহেবের ৪-১১-৭৫ ইং লিখিত ১/ডিআইজি/১(৪) চিঠি মূলে জানিতে পারিয়া আমি ৪-১১-৭৫ ইং তাং ১৮-০০টার সময় কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত হইয়া জেলার সাহেবের শনাক্তমতে ও পার্শ্বলিখিত স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে আমি মৃত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের সুরতহাল প্রস্তুত করিলাম। মৃতদেহ কেন্দ্রীয় কারাগারের নূতন জেলের পূর্ব পার্শ্বের ১ নং কোঠায় বারান্দায় একটি কাঠের চৌকিতে উত্তর শিয়রে শায়িত অবস্থায় দেখিতে পাইলাম। তাহার মৃতদেহ সাদা ডোরাকাটা চাদরে আবৃত।
তাহার শরীর উলট-পালট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করিয়া বুকের ডান পার্শ্বে ৬টি বেয়নেটের রক্তাক্ত জখম আছে বলিয়া মনে হয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩ তারিখের সকাল আনুমানিক ৪-৩০ মিঃ সময় মৃত্যু সংঘটিত হয়। মৃতদেহ পচিয়া যাইতেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করিয়া ময়না তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া গেল।
স্বাক্ষর/মি.রহমান ৪-১১-৭৫ ইং
মৃতদেহটা জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের বলিয়া শনাক্ত করিলাম। স্বাঃ আমিনুর রহমান ৪-১১-৭৫ইং
আমাদের সামনে সুরতহাল করা গেল। স্বাঃ আঃ ওয়াহিদ মৃধা, সোবেদার স্বাঃ মোঃ ইছহাক মিয়া, ৪-১১-৭৫ইং
সত্যায়িত, স্বাক্ষর অস্পষ্ট, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ, ঢাকা।

তাজউদ্দিন আহমদ

আমি মোঃ আজমল চৌধুরী, ১ম শ্রেণীর হাকিম, ঢাকা সদর (দঃ) কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি সাহেবের ৪-১১-৭৫ ইং লিখিত ১/ডিআইজি/১(৪) চিঠি মূলে জানিতে পারিয়া আমি ৪-১১-৭৫ ইং তাং ১৭-৪৫ মিঃ কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত হইয়া জেলার সাহেবের শনাক্তমতে ও পার্শ্বলিখিত স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে জনাব তাজউদ্দিন আহমদের মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করিলাম। মৃতদেহ কেন্দ্রীয় কারাগারের নূতন জেলের পূর্ব পার্শ্বের ১ নং কোঠায় বারান্দায় একটি কাঠের চৌকিতে উত্তর শিয়রে শায়িত অবস্থায় দেখিতে পাই। তাহার মৃতদেহ সাদা চাদর দিয়া আবৃত আছে।
তাহার শরীর উলট-পালট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন দেখা গেল। জখমগুলা বুলেটের বলিয়া মনে হয়।
কারাগার কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন দেখিলাম। মৃত্যুর সময় ৩-১১-৭৫ তারিখ সকাল আনুমানিক ৪-৩০ ঘটিকার সময় বলিয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। আজ রাত ৭ ঘটিকার সময় মৃতদেহ পচিয়া যাইতেছে বলিয়া মনে হইতেছে। সেহেতু এখানেই জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করিয়া ময়না তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া গেল।
স্বাক্ষর/মোঃ আ. চৌধুরী ৪-১১-৭৫ ইং
মৃতদেহটা জনাব তাজউদ্দিন সাহেবের বলিয়া শনাক্ত করিলাম। স্বাঃ আমিনুর রহমান ৪-১১-৭৫ইং
আমাদের সামনে সুরতহাল করা গেল। স্বাঃ আঃ ওয়াহিদ মৃধা, সোবেদার স্বাঃ মোঃ ইছহাক মিয়া, ৪-১১-৭৫ইং
সত্যায়িত, স্বাক্ষর অস্পষ্ট, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ, ঢাকা।

আজমল চৌধুরী এম. মনসুর আলী এবং কামরুজ্জামানের সুরতহালও করেন। প্রতিবেদনে সময়কালও একই থাকে। (চলবে)

ছবি: 
১। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ দেশে ফেরার পর চার জাতীয় নেতার সান্নিধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বঙ্গবন্ধু
২। চীফ অব জেনারেল স্টাফ ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ বীরউত্তম
৩। মোশতাকের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিন বাহিনীর প্রধান। সবার বাঁয়ে জিয়াউর রহমান, সবার ডানে শফিউল্লাহ
৪। তাজউদ্দিনের মৃতদেহ
৫। মনসুর আলীর সুরতহাল রিপোর্ট
৬। কামরুজ্জামানের সুরতহাল রিপোর্ট

(
এই পোস্টটির লিংক শেয়ার করা যাবে, কিন্তু কোনো অংশ লেখকের অনুমতি ছাড়া কোথাও ছাপা যাবে না- অমি রহমান পিয়াল।)

No comments:

Post a Comment

Do you think Awami League doing well?
Which project present govt. you like?